রম্য: ব্যাচেলরনামা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:১৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২১

সারোয়ার মিরন: নচিকেতার বিখ্যাত উক্তিটি মিথ্যা প্রমান করার জন্য ব্যাচেলর নামের অদ্ভুদ প্রানীটিই যথেষ্ট। তিনি বলেছেন পুরুষ মানুষ দুই প্রকার। জীবিত এবং বিবাহিত। কিন্তু আমি বলবো পুরুষ মানুষ তিন প্রকার। যথাঃ জীবিত, বিবাহিত এবং ব্যাচেলর। নচিকেতা অনেকটা ইচ্ছে করেই আমাদের মতো চাল চুলোহীন ব্যাচেলরদের বাদ রেখেছেন।

ব্যাচেলররা পৃথিবীর আদিম প্রানিদের আধুনিক বংশধর। আমরাই বর্তমান বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার সবচেয়ে বেশি। বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে ব্যাচেলরদের দেবেনা। একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া নিতে কতো কষ্ট। অনেকটা হিমালয় জয় করার মতো বড়সড় ব্যাপার।মাঝে মাঝে মনে হয় হিমালয় জয় করাও সহজ কিন্তু ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া নেয়া দুরুহ।

খাবার দাবারে বুয়ার উপর নির্ভরশীল। বুয়ার মেজাজ মর্জির উপর আমাদের তিনবেলার খাবার নির্ভর করে। বেশির ভাগই আলু ভর্তা আর ডালের পানি। ডালের পানি বলতে ডাল খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবলই হলুদ রং সাদৃশ।

আমরা রাত জাগি। আড্ডা দেই। কার্ড খেলি। দশটায় ঘুম থেকে জাগি।মশারি যে একবার টাঙ্গিয়েছি আর খোলা হয়নি। খুলেও লাভ কি আবার টানানো লাগবে। প্রতি রাতে এ উটকো ঝামেলা করবে কে? তাই মশারি ফিক্সড করে দিয়েছি।

আমরা ফ্লোরিং করি।একজনের খাটে দুজন ঘুমাই। সুখ দুঃখ শেয়ার করি। টাকা পয়সা ধার দেই।নোট বিনিময় করি। একজনের বইয়ে দশজন পড়ি। একজনের জামা প্যান্ট অন্য জনে পরি। সকাল বেলা বাথরুমে সিরিয়াল দেই।টয়লেটের দরোজা পিটাই। ঝগড়া করি।

আমাদের খুপরি গুলো এক একটা মিনি সংসদ।জম্পেসে চলে কথার পিঠে কথা। রাজনীতি সমাজনীতি অর্থনীতি প্রেম ভালোবাসা কিছুই বাদ যায় না আমাদের আলোচ্য বিষয় থেকে। ক্লাসের সুন্দরী মেয়েটার হাঁটা চলা, ম্যাডামের চাল চলন, ক্লাস কিংবা লেকচার দেবার ফর্মুলা, মহিলা কলিগদের ঘিরে চলে তির্যক মন্তব্যের বাতুলতা।

আমাদের শোবার খাট গুলো আগোছালো থাকে। বিছানা থাকলে চাদর থাকেনা। আবার থাকলেও এলোমেলো নয়তো অপরিষ্কার থাকে। দেশের নানান প্রান্ত থেকে আসা বিশ ঘরের দশজন মিলে আমরা মিলে মিশে থাকি।খাই দাই ফুর্তি করি।

টিউশনী করি। চাকরী করি। ভাবলেশহীন জীবন কাটাই। পথ চলতে কেউ একজনের তীব্র অভাববোধ করি। আমাদের জন্য কেউ পথ চেয়ে বসে থাকে না। আমাদের ফিরে আসার জন্য প্রহর গোনে না। আমাদের পিছুটান নেই। সীমাহীন কষ্টের মাঝেও আমরা হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করি। অনাগত জীবনের কথা ভাবি।

নিজ পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। বিয়ে শাদি করার জন্য নিজেকে তৈরি করি।টুকটাক সঞ্চয় করি। পড়ালেখা শেষ করার আশায় থাকি। স্বপ্ন দেখি স্বপ্নের। আমাদের জীবন চলে নদীর মতো এঁকেবেঁকে। অনেকটা যেখানে গিয়ে থামে এরকম।

জানি ব্যাচেলর জীবনের পরিসমাপ্তী হয়তো একদিন ঘটবে।কিন্তু আসলেই কি মুক্তি মিলবে এমন জীবন থেকে?? জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে কতটুকু আমাদের সুখ কপালে সইবে?!!

বিবাহিতরা বলে ব্যাচেলর জীবনটাই উত্তম।আর আমরা বলি কষ্টের। ব্যাচেলরত্ব কাটাতে আমরা চরম উদগ্রীব!!! কোনদিকে যাবো- স্বপ্ন না বাস্তবতা????? নাকি যেথায় গিয়ে ঠেকে!!

সম্পাদক, দেশালোক ডটকম