বেসরকারি অনার্স কোর্স ননএমপিও থাকা শিক্ষাব্যবস্থায় হতাশাজনক

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২০

সারোয়ার মিরনঃ দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা সবার আগে পাওয়ার কথা! আদতে পাচ্ছেন না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আটাশ বছর তারা ননএমপিও হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো সংশোধন করা হলেও উচ্চ শিক্ষার এ স্তরটি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয় সরকারী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক। কিন্তু বেতন ভাতার বেলায় সে নিয়ম নীতি কিংবা মানবিকতা বিবেচ্য হয়না।

প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভাতা প্রদানের নামে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার নামমাত্র সন্মানি দেয়া হয়। যা বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে সাংঘর্ষিক। কোভিড-১৯ এর কারনে এ সন্মানিও বন্ধ রয়েছে গতো কয়েকমাস।

বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় বেসরকারী স্কুল কলেজ এমপিওয় নীতিমালা-২০১৮ সংশোধনের উদ্যোগ নেয় গত বছরের মাঝামাঝি। বেশ কয়েক দফা সংশোধনী সভা শেষে গতকাল ২৩ নভেম্বর চূড়ান্ত হয়। জানা গেছে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে নীতিমালা প্রকাশ করা হবে।

এবারও বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের বাদ রাখা হয়েছে! তবে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের বিষয়ে জাতীয় বিশবিদ্যালয়ের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সংশোধন কমিটি জানিয়েছে। ডিগ্রী তৃতীয় পোস্ট, অনার্স মাস্টার্স এর সাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া।

জাতীয় বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আলোচনা করা হবে- এটি মূলত শুভংকরের ফাঁকি! গতো দু তিন বছর ধরে আমরা এ বিষয়টি শুনে আসছি। শিক্ষামন্ত্রীও কথা বলবেন বলে একাধিকবার বলেছেন। নীতিমালা সংশোধনের এ দীর্ঘ সময়েও তিনি বা সংশোধন কমিটি আলোচনা করার প্রয়োজন অনুভব করেন নি। যদিও এ সংশোধনী কমিটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধিও ছিলেন।

সংশোধন কমিটির প্রথম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের এমপিও প্রদানের বিষয়ে ঐক্যমত পোষন করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি অজানা কারনে বাদ দেয়া হয়।

ডিগ্রি পাস কোর্সও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন। এখানে দুজন প্রভাষক এমপিও দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। মাদরাসার ফাজেল এবং কামিল স্তরের প্রভাষকরাও এমপিও পেয়ে থাকেন। কেবল সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত না থাকার অজুহাতে অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিও বঞ্চিত রাখছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাউশি।

বেসরকারী অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিও পাওয়ার শত যুক্তি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তিনটি সুপারিশ, শিক্ষা সম্পকিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশ, মন্ত্রনালয়ের আর্থিক সংশ্লেষ, একই নিয়মে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সরকারীকৃত কলেজ সমূহে আত্মীকৃত, সুশীল এবং শিক্ষাবিদদের মতামত, শিক্ষক নেতাদের পজিটিভ মতামত, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ননএমপিও শিক্ষক কর্মরত থাকা অযৌক্তিকসহ বহু যুক্তি।

২০১০ সালের পর থেকে এমপিও দাবীতে অনার্স শিক্ষকরা এমপিও দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। বহু সংবাদ সম্মেলন, মিড়িয়া কবারেজ, মাউশি-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মন্ত্রনালয়ে ধরনা দিয়েও এমপিও বিষয়ে সুরাহা করতে পারেনি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাক্ষেত্রে অভুতপুর্ব অবদান রেখে চলেছেন। তিন শতাধিক কলেজ জাতীয়করন (বেসরকারী অনার্স কোর্সসহ), চার শতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করন, ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরন, সকলস্তরে সকল শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিকরন, বেসরকারি শিক্ষকদের পেস্কেলসহ আরো যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছেন।

দেশের বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থায় কেবলমাত্র ননএমপিও হিসেবে বাদ রয়ে গেছেন বেসরকসরী অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকরা। তিন শতাধিক কলেজে এর শিক্ষক সংখ্যা মাত্র সাড়ে তিন হাজার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, মাউশি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট আকুল আবেদন বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওর ব্যবস্থা করে শিক্ষকদের রুটি রুজি এবং জীবনমান রক্ষায় এগিয়ে আসবেন।

সারোয়ার মিরন