দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা ও বন্যার কবলে বিশাল এলাকা

অবৈধ বাঁধ এবং দখলেই সর্বনাশা ভুলুয়া

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪

সারোয়ার মিরন:
লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্যবাহী নদীগুলোর অন্যতম একটি রামগতি-কমলনগর উপজেলার ভূলুয়া নদী। দখল-দুষনে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক এ নদী। পাশাপাশি পলি জমে এক সময়ের প্রমত্তা ভুলুয়া নদী এখন অনেকটাই মৃত নদীতে পরিণত হলেও বর্ষায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতা। যা ধীরে ধীরে রুপ নিচ্ছে বন্যায়। গত কয়েকদিন ধরে রামগতি উপজেলার চরবাদাম, চরপোড়াগাছা অংশের বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করে দেখা গেছে ভূলুয়া নদী দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিশাল বিশাল মাছের ঘের এবং দু পাশে বাড়িঘর তৈরি এবং অবৈধ জাল পেতে নদী দখলে নিয়ে গেছে। পুরো নদীতে এখনো দেখা মিলছে বাঁশ দিয়ে দখল সীমানার অসংখ্য চিত্র। অন্যদিকে ইটভাটা মালিকরা তাদের পরিবহনের স্বার্থে নদীর ওপর একাধিক কাঁচা সড়ক নির্মাণ করে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন নদীটি। এছাড়াও দখল এবং অবৈধ বাঁধের ফলে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ভুলুয়ার দু পাশের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধী হয়ে আছেন। পাশাপাশি গত দশদিন ধরে বন্যায় আক্রান্ত।

৩০ আগস্ট, শুক্রবার বন্যা কবলিত এলাকাসমূহ গিয়ে দেখা যায়, গত দু দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এলাকাভেদে কোথাও কোথাও এক থেকে দু ফুট পর্যন্ত পানি কমেছে। তবে ঘর বাড়িতে এখনই ফিরতে পারছেন না বেড়ীবাঁধের ঢালে এবং বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজন। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা যায়, গত তিন দিনে পানি কমেছে। এভাবে আরো কিছুদিন বৃষ্টি না হলে ধীরে ধীরে পানি নেমে যাবে। তবে নদীতে নানান প্রতিবন্ধকতা থাকায় কিছুটা নিম্নাঞ্চল এলাকা আছে সেসব স্থানের পানি কমতে সময় লাগবে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভুলুয়া নদীর বেড়ীবাঁধের স্লুইসগেটগুলো পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রয়োজন হলে বাহিরের পানি সরানোর জন্য তার গেটসমূহ খুলে দেওয়া হতে পার।

জানা যায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার একটি নদী হচ্ছে ভুলুয়া নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৭১ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৮৫ মিটার। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে এ নদী। এক সময় এ নদীতে উত্তাল ঢেউয়ে প্রবাহমান ছিল পানি। ১৯১২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত প্রাণচঞ্চল নদী ছিল ভুলুয়া। আশপাশের লাখো মানুষ কৃষি উৎপাদনসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন নদীর পানি। বড় বড় সাম্পান, জাহাজ চলাচল করত এ নদীতে। বহু জাতের প্রাকৃতিক মাছের সমাহার ছিল নদীটিতে। জাল ফেলে মাছ ধরে চাহিদা মেটানোসহ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয়রা।
বর্তমানে নদীটির বিভিন্ন স্থান কিছু অসাধু প্রভাবশালী দখল করে মাঝখানে বাঁধ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করে আসছেন। কেউ কেউ নদীর তীর ঘেঁষে ঘরবাড়ি তুলে দখল করে রেখেছেন। আবার নদীর উপর বিশাল বিশাল মাছের প্রজেক্ট তৈরি করে নদীটি দখল করে রাখেন। নদীটি খনন করে এর স্বরূপ ফিরিয়ে দিলে এ অঞ্চলের প্রায় ৪০হাজার কৃষকসহ লাখো মানুষ এর সুফল ভোগ করবে।

স্থানীয় আবদুর রহিম, শাহজাহান মিয়া, জমির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জানান, অপরিকল্পিতভাবে নদীর তীরে ইটভাটা তৈরি, নদীর দু পাড়ে জনপ্রতিনিধিদের ভিটা বিক্রি, দোকানপাট নির্মান, বেঁদে সম্প্রদায়কে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেয়া ইত্যাদি কারনে ভুলুয়া হয়ে মেঘনা নদীতে এ অঞ্চলের পানি যেতে পারছেনা। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, রামগতি-কমলনগর উপজেলা যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে ইতিমধ্যে ভুলুয়া নদীর ছোট বড় বেশ কয়েকটি বাঁধ ও অবৈধ জাল অপসারণ করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ অভিযান অব্যাহত রাখা যায় নি। পানি কমলে দ্রুত এসব বাঁধ, দখল এবং অবৈধ জাল অপসারনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (রামগতি উপ-বিভাগ) ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, বন্যার পানি এক থেক দেড় ফুট কমেছে। আমরা প্রতিদিনই বন্যায় আক্রান্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছি। ভুলুয়া নদী দখল ও খনন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তোরাবগঞ্জ থেকে কমলনগর ও রামগতি হয়ে ছেউয়াখালী সেতুর নিচ দিয়ে এ অঞ্চলের পানি মেঘনায় প্রবাহিত হয়ে থাকে। কোথাও দখল, বাঁধ কিংবা অগভীরতার দেখা মিললে আমরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহি অফিসারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেব।