এমপিওভুক্তির দাবি

প্রধানমন্ত্রী বরাবর বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের খোলা চিঠি

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৩২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০২০

দেশালোক ডেস্কঃ

মহাত্মন,
আপনাকে ধন্যবাদ এই জন্য যে, দেশের এই মহাদূর্যোগে দক্ষতার সাথে কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধ করে চলেছেন। খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ত্রাণ তহবিল গঠন করে সুষ্ঠুভাবে তা বিতরণ করে চলেছেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত এবং বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আমরা আপনাকে আন্তরিক ভাবে সম্মান শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই জন্য যে, মা-বাবা ও গোটা পরিবারকে হারিয়েও বিচলিত না হয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করে বিশ্ব বরেণ্য টপটেন নেতৃত্বের আসনে বসে সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করছেন।

আমরা দেশের অবহেলিত নন এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক সমাজ।বর্তমানে আমরা গার্মেন্টস কর্মীদের চেয়েও বেশি অসহায়, বেতন-ভাতা বিহীন সামাজিক ভাবে অবহেলিত, পিতা-মাতা সন্তানদের মৌলিক চাহিদাও পূরণে ব্যর্থ, লবণ আনতে পানতা ফুরায়, অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছি। অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ ফান্ডে টাকা না থাকায় ৫/৭/১১ মাস ধরে যৎসামান্য বেতনও বন্ধ রেখেছেন, লজ্জায় এ সকল শিক্ষক অন্যের নিকট সাহায্য চাইতে পারছেন না। সামাজিক কারণে দিনমজুরের কাজও করতে পারছেন না, ক্ষুধার যন্ত্রণা ও অর্থ অভাবে অনেক শিক্ষক সবজির দোকান, অটোরিক্সা চালাচ্ছেন। অনেকে চক্ষু লজ্জায় শহরের ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে কৃষি কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ চা-পানের দোকানদারী করছেন, কেউ কেউ প্রাইভেট টিউশনি করে সংসার চালাচ্ছেন। সামাজিক অবক্ষয় এমন হয়েছে যে, একজন রিক্সাওয়ালাও তার মেয়েকে নন-এমপিও অনার্স শিক্ষককে বিবাহ দিতে চান না, বিত্তবানরা তো চানই না। কর্মসংস্থানের চরম সংকটে অনেকে রাজমিস্ত্রির লেবার হয়ে দিন চালাচ্ছেন। আবার অর্থের অভাবে ইন্টারনেট সেবা ফ্রি না থাকায় অনলাইন ক্লাশ নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। শিক্ষকগণ আর্থ-সামাজিক ভাবে চরম লাঞ্চিত অবহেলিত এবং করোনা মহাসঙ্কটে খুবই বেদনাদায়ক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মানবিক মুল্যবোধ সর্বনিম্ন স্তরে, স্বপ্রণোদিত ভাবে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের কেউ সাহায্য সহযোগিতা করছেন না, অনেকে বলছেন এই শিক্ষকতার পেশায় আাসাটা নাকি – জেনে শুনে বিষ পান করেছি। আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার, অন্যকোন কর্মসংস্থান খুজে চাকুরি করার বয়সও আমাদের নেই। আমরা কি করবো? আমরা কি সত্যিই বিষ পান করে আত্নহত্যা করবো! এটা কি একজন শিক্ষক হিসেবে শোভা পাবে!
নন এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামো তে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিও প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে তিন তিনটি পত্র/নির্দেশনা শিক্ষামন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে কিন্তু শিক্ষামন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করছেন না। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে,শিক্ষামন্ত্রণালয় আপনার সরাসরি নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন।

দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে নিয়মিত শতভাগ বেতন-ভাতা দেন না। করোনা প্রাদুর্ভাবের পূর্বে কলেজ ভেদে ৩০০০/- হতে ১০০০০হতে ১৫০০০/টাকা বেতন দেওয়া হত, আবার কখনো কখনো কয়েক মাসধরে বেতন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হত । বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে বেতন বঞ্চিত হয়ে আমরা খুবই কষ্টে আছি। আমাদের সামাজিক ও আর্থিক দুঃখ দূর্দশার কথা এক আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নাই।

হে মানবতার মা,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে ৩টি আকুল আবেদন করছিঃ

১। করোনায় বিধস্ত-বিপন্ন মৃত প্রায় নন এমপিও অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের অসহায় পাঠদানরত শিক্ষকদের জনবলকাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে অথবা বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করে এমপিও দেয়ার ঘোষণা দিন।

২) রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার মা হিসেবে চির বিশ্ব নন্দিত হয়েছেন, তাই মানবিক কারণে বিশেষ ব্যবস্থায় হলেও পাঠদানরত ননএমপিও (অনার্স-মাস্টার্সসহ) শিক্ষকদের এমপিও ভুক্তির সুব্যবস্থা করুন।

৩) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চির স্মরণীয় করে রাখতে মুজিব শতবর্ষে শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে ও বাস্তবায়ন করে চির স্মরণীয় বরনীয় হয়ে থাকবেন, এটা আমাদের আশা ও বিশ্বাস। আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
আমাদের দুঃখ কষ্ট অনুধাবন করে এমপিও প্রদান করে জাতীয়করণের ঘোষণা দিতে মহান আল্লাহ আপনাকে সহায়তা করুন-আমীন।

বিনীত নিবেদক,
মোঃ মেহরাব আলী
সদস্য সচিব
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি।