বাংলাদেশ ক্রিকেটের দীর্ঘশ্বাসের একাদশ; যার অধিনায়ক আশরাফুল

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২০

ছোট্ট চোখে বিরাট স্বপ্ন, যেতে হবে ওই চূড়ায়। পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। যে পথে বাঁক বদল হয়, শেষ হয় জাতীয় দল নামের গন্তব্যে। সেখান থেকে আবার নতুন পথচলা শুরু। সেই পথচলায় অনেকেই দাপুটে, অনেক আবার পা হড়কে পতিত হন নিকষ কালো অন্ধকারে।

গুটিগুটি পা ফেলা আর স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে এই যাত্রা। কিন্তু স্বপ্নকে ছোঁয়ার পর অনেকেই হারিয়ে ফেলেন কক্ষপথ। অপার সম্ভাবনা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেও নিভে যান দপ করে। কিংবা যথেষ্ট সুযোগের অভাবে সামর্থ্যের পুরোটা দেওয়ার আগেই হয়ে ওঠেন অতীত স্মৃতি। আফসোস, আক্ষেপ নিয়ে ইতি টেনে ফেলেন ক্যারিয়ারের।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমন ক্রিকেটার কম নেই। তালিকাটা বেশ লম্বাই, দীর্ঘশ্বাসও তাই দীর্ঘ। এই দীর্ঘশ্বাস প্রতিভা অপচয়ের, এই দীর্ঘশ্বাস মেধাবীদের কাছ থেকে সেবা না পাওয়ার। কয়েকটি নাম বললেই বুঝে ফেলা সম্ভব কোন সব ক্রিকেটারের কথা বলা হচ্ছে। এই তালিকার ক্রিকেটাররা হলেন মেহরাব হোসেন অপি, আফতাব আহমেদ, তালহা জুবায়ের, শাহরিয়ার নাফিস, এনামুল হক জুনিয়ররা।

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন; এদের নিয়ে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন থাকলেও হয়তো পূরণ হয়নি ৫০ ভাগও। এমন ক্রিকেটারদের নিয়ে একাদশ তৈরি করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। কেন দীর্ঘ হয়নি পথ, সেই উত্তরও জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এই একাদশের ক্রিকেটাররা তাদের উপলব্ধি জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্রিকেটারের মুখেই যথেষ্ট সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ। দেখে নেওয়া যাক দীর্ঘশ্বাসের এই একাদশে কোন ক্রিকেটারদের জায়গা।

মেহরাব হোসেন অপি: বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান তিনি। ব্যাটিং স্টাইল ছিল অনুকরণীয়, ২২ গজে ছিলেন খুব সাহসীও। অনায়াসে খেলে ফেলতেন কঠিন সব শট। যা তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে অপরিচিত। বাংলাদেশের সেই সময়ের দলের মধ্য থেকে যাকে বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান ভাবা হতো, তিনি মেহরাব হোসেন অপি।

প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভার তালিকা করলে ওপরের দিকে থাকবেন বাংলাদেশের সাবেক এই ব্যাটসম্যান। তার মেধা, সামর্থ্য জানান দিচ্ছিল, লম্বা রেসের ঘোড়া হবেন দলে ঢুকেই খুব দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়ে যাওয়া অপি। অথচ তার ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছিল মাত্র ৫ বছরে। ৯ টেস্ট ও ১৮ ওয়ানডে খেলেই ইতি টানতে হয়েছিল ক্যারিয়ারের।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ১৯৯৮-২০০৩, ৫ বছর। ম্যাচ: ৯ টেস্ট এবং ১৮ ওয়ানডে

নাফিস ইকবাল: তামিম ইকবালের বড় ভাই নাফিস ইকবাল। মেধা, সামর্থ্যের দিক থেকে কেউ কেউ তামিমের চেয়েও এগিয়ে রাখেন নাফিসকে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আলোচনায় ছিলেন সাবেক এই ওপেনার। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই নাফিসকে বলা হচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ।

শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, ভবিষ্যৎ অধিনায়কও ভাবা হয়েছে সাবেক ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে। বিশেষ করে লঙ্গার ভার্সনে নাফিসের লম্বা পথ হবে, এমনটা ভাবা হয়েছিল। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই তার পরিপক্কতা দারুণ ছিল। কিন্তু এত সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেও নাফিসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মাত্র ২ বছরেই থেমে যায়। এ পথে ইনজুরি একটা বাধা ছিল। তবে ক্যারিয়ার বড় না হওয়ার পথে সবচেয়ে বাধা ছিল সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৪-০৬, ২ বছর। ম্যাচ: ১১ টেস্ট ও ১৬ ওয়ানডে

শাহরিয়ার নাফিস: নাফিস ইকবাল, শাহরিয়ার নাফিসদের শুরু একই সময়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ছিলেন ‘কমপ্লিট প্যাকেজ।’ কেবল ব্যাটিং নয়; কথাবার্তা, শিক্ষা, চালচলন, চুলের স্টাইল বা পোশাকে আধুনিকতার ছোঁয়া নিয়ে এসেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পর দলে জায়গা করে নিতে সময় নেননি তিনি।

অভিষেকের পর থেকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন শাহরিয়ার নাফিস। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি, ম্যাকগ্রাদের সামলে ৪৭ রান করেন তিনি। এর এক ম্যাচ পর অজিদের বিপক্ষে করেন ৭৫ রান। তার পর থেকে রানের ফুলঝুরি ফুটতে থাকে তার ব্যাটে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক বছরে হাজার করেন নাফিস।

ব্যাট হাতে ঝলক দেখিয়ে দ্রুতই সহ-অধিনায়ক হয়ে যান। বিবেচনায় চলে আসেন ভবিষ্যৎ অধিনায়কেরও। বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক ছিলেন নাফিস। ২০০৭ বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচে খারাপ করার পর একাদশ থেকে বাদ পড়েন তিনি। খারাপ সময়ের শুরু তখনই। পরে যুক্ত হয় ভারতের নিষিদ্ধ লিগ আইসিএল খেলার ব্যাপারটি। যা তাকে পিছিয়ে অনেকটা। এরপর চেষ্টা করলেও সেভাবে সুযোগ না পাওয়ায় দীর্ঘ হয়নি তার পথচলা।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৫-২০১৩, ৮ বছর। ম্যাচ: ২৪ টেস্ট, ৭৫ ওয়ানডে ও একমাত্র টি-টোয়েন্টি

মোহাম্মদ আশরাফুল: এই একাদশে মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম দেখে খটকা লাগার কথা। ১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তার। তবু বাংলাদেশ ক্রিকেটে হয়তো সবচেয়ে বড় আফসোসের নাম আশরাফুল। যাকে বলা যেতে পারে এই একাদশের অধিনায়ক। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান আশার ফুল হয়ে জাতীয় দলে নাম লেখান। মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন তিনি। যা এখনও সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড হয়ে আছে।

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গৌরবের জয়ের নায়ক আশরাফুল। দুই বছর পালন করেছেন অধিনায়কত্বের দায়িত্বও। কিন্তু হঠাৎই তার ক্যারিয়ারে ‘ফুল স্টপ’ পড়ে যায় বিপিএলে ফিক্সিং কাণ্ডে। আশার ফুল ঝরে যায় সেখানেই। বাংলাদেশ হারায় নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে। এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আশরাফুল। কিন্তু তার জন্য জাতীয় দলে ফেরাটা যে কাটা বেছানো পথ পাড়ি দেওয়ার মতো, সেটা তিনিও জানেন ভালো করে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০১-১৩, ১২ বছর। ম্যাচ: ৬১ টেস্ট, ১৭৭ ওয়ানডে ও ২৩ টি-টোয়েন্টি

অলোক কাপালি: নাফিস ইকবাল বা আশরাফুলদের মতো বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই বিসিবির রাডারে ছিলেন না অলোক কাপালি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও নজরকাড়া পারফরম্যান্স ছিল না তার। বাংলাদেশের দুই পাকিস্তানি কোচ আলী জিয়া ও মহসিন কামাল সেরা উপহার ছিলেন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার।

বাংলাদেশে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে নিন্দিত সাবেক এই দুই কোচ নেটে অলক কাপালির খেলা দেখে পছন্দ করে ফেলেন। কাপালির সামর্থ্যে ভরসা রেখে শ্রীলঙ্কা সফরে নিয়ে যান তারা। প্রতিদানও দেন কাপালি। অভিষেক সিরিজেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন দিনি। তাই সম্ভাবনা নিয়ে দলে না ঢুকলেও দ্রুত জায়গা পোক্ত হয়ে যায় তার।

’মিনি’ অলরাউন্ডার কাপালি হয়ে ওঠেন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। স্টাইলিশ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে করতেন লেগ স্পিন। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার ফিল্ডিংয়েও ছিলেন অসাধারণ। দ্রুত শেখার সামর্থ্য থাকা কাপালির পথ আরও দীর্ঘ হতে পারতো। কিন্তু আইসিএলে অংশ নেওয়ায় বিসিবির বাম নজরে পড়ে যান কাপালি। এরপর সেভাবে আর সুযোগ মেলেনি তার।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০২-১১, ৯ বছর। ম্যাচ: ১৭ টেস্ট, ৬৯ ওয়ানডে ও ৭ টি-টোয়েন্টি

রাজিন সালেহ: অলোক কাপালির মতো রাজিন সালেহও সম্ভাবনা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেননি। কিন্তু জাতীয় দলে নাম লিখিয়েই নিজের পরিপক্কতার প্রমাণ দিয়ে দেন তিনি। রাজিনই বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার, যিনি ফিল্ডিং দিয়েও নজর কাড়েন। অভিষেক টেস্টের স্কোয়াডে শুধু ফিল্ডিংয়ের কারণেই তাকে রাখা হয়েছিল।

একজন টেস্ট ব্যাটসম্যানের যতটা সাহসী হতে হয়, রাজিন ঠিক তেমনই ছিলেন। ফিটনেসেও দলের বাকিদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি। রাজিনকে মনে করা হয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ভরসা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যখন পরিপক্কতা ছিলই না, রাজিন তখন নিজেকে পুরোপুরি ভিন্নভাবে হাজির করেছিলেন। ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি তার বোলিংও কার্যকর ছিল।

ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটসম্যান না হওয়ার পরও কিছুদিন এই ফরম্যাটে ভালো করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তার নামের পাশে ৩৫-৪০টি টেস্ট থাকতে পারতো। কিন্তু সুযোগের অভাবে তাকেও আগেইভাগেই বিদায় নিতে হয় জাতীয় দল থেকে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৩-০৮, ৫ বছর। ম্যাচ: ২৪ টেস্ট ও ৪৩ ওয়ানডে

আফতাব আহমেদ: বাংলাদেশের সাবেক এই ব্যাটসম্যানই প্রথম, যিনি প্রতিপক্ষ বা প্রতিপক্ষের বোলার দেখে ব্যাটিং করতেন না। খেলতেন নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই। বাংলাদেশ তখন অন্যদের দেখে ভীত হলেও ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে বসতেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন আফতাব। দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে জাতীয় দলে যাত্রা শুরু করেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ওই সময়ে প্রথম উইকেট পড়লে গ্যালারিতে আনন্দ হতো আফতাব নামবেন বলে। প্রতিভা বা সামর্থ্যের কোনো ঘাটতি ছিল না তার। কিন্তু পিছিয়ে পড়েন চেষ্টার কমতির কারণে।

কিছুটা অলস প্রকৃতির ছিলেন আফতাব। অনুশীলনে আর সবার মতো সরব ছিলেন না তিনি। নিজেকে অন্য পর্যায়ে নেওয়ার যে চেষ্টা, সেটা তার মধ্যে সেভাবে ছিল না। যে কারণে প্রত্যাশিত অনুপাতে তার উন্নতি হয়নি। তবু আরও কয়েক বছর খেলতে পারতেন সাবেক এই ক্রিকেটার। কিন্তু আইসিএল খেলায় বাকিদের মতো তাকেও আর সেভাবে বিবেচনা করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৪-১০, ৬ বছর। ম্যাচ: ১৬ টেস্ট, ৮৫ ওয়ানডে ও ১১ টি-টোয়েন্টি

সোহাগ গাজী: অলোক কাপালি, রাজিন সালেহর মতো সোহাগ গাজীও বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তবে ঘরোয়াতে সব সময়ই ভালো করেছেন তিনি। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও অবদান রাখতেন তিনি। হইচই ফেলে জাতীয় দলে না ঢুকতে পারলেও এই কাজটা তিনি জাতীয় দলে ঢুকে করেছেন।

টেস্ট ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তার এই রেকর্ড আছে। প্রকৃতিপদত্ত প্রতিভা নিয়ে জাতীয় দলে নাম লেখান গাজী, সাফল্যও মিলছিল। কিন্তু হারিয়ে যেতে সময় লাগেনি। নিজেকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে তাড়না, সেটা তার মাঝে সেভাবে দেখা যায়নি বলে মনে করেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

দলে তিথু হতে ডানহাতি এই অফ স্পিনার যথেষ্ট চেষ্টা করেননি বলেও মত দেন কেউ কেউ। অবশ্য সময় ফুরিয়ে যায়নি সোহাগ গাজীর জন্য। সর্বশেষ ২০১৫ সালে জাতীয় দলের হয়ে খেলা গাজী এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় দলে ফেরার লক্ষ্য নিয়ে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০১২-১৫, ৩ বছর। ম্যাচ: ১০ টেস্ট, ২০ ওয়ানডে ও ১০ টি-টোয়েন্টি

এনামুল হক জুনিয়র: বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই নিজের আগমনী বার্তা দেন এনামুল হক জুনিয়র। বাঁহাতি এই স্পিনার জাতীয় দলে ঢোকার পর বলা হচ্ছিল, মোহাম্মদ রফিকের উত্তরসূরী মিলে গেছে। সে সময় বাংলাদেশের স্পিনাররা সেভাবে বল ঘোরাতে পারতেন না। কিন্তু এনামুল জুনিয়র প্রকৃতিগতভাবে টার্নার ছিলেন।

এ কারণে আগেই জাতীয় দলে সুযাগ হয়ে যায় তার। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার আগেই জাতীয় দলে অভিষেক হয় এনামুলের। টেস্টের নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠা এনামুল ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক। সিরিজ জেতার পথে তার বড় অবদান ছিল। সিরিজ সেরার পুরস্কারও তার হাতে উঠেছিল।

এরপর দারুণ পারফরম্যান্স করলেও তাকে সেভাবে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ধীরে ধীরে তাই দৃশ্যপটের বাইরে চলে যেতে হয় তাকে। যদিও হার মানেননি এনামুল জুনিয়র। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করে এসেছেন তিনি। এমন কি এখনও ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার বাঁহাতি এই স্পিনার।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৩-১৩, ১০ বছর। ম্যাচ: ১৫ টেস্ট ও ১০ ওয়ানডে

সৈয়দ রাসেল: বাংলাদেশ ক্রিকেটের আনসাং হিরো সৈয়দ রাসেল। যার উপস্থিতি সেভাবে বোঝা যেত না, কিন্তু দলের জন্য বড় অবদান রাখতেন। বলে তেমন গতি ছিল না। কিন্তু সুইংয়ের ভেল্কিতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়তেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে সুইং ভালোভাবে পরিচিত হয়।

পাশাপাশি দারুণ স্লোয়ার ডেলিভারি দিতে পারতেন। উইকেট, ব্যাটসম্যান এবং নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে বোলিং করতেন রাসেল। যা একজন বোলারের সবচেয়ে বড় গুণ। বেশ অনেকটা সময় ধরেই তিনি দলের হয়ে অবদান রেখেছেন। কিন্তু ইনজুরি ও জেমি সিডন্স কোচ হয়ে আসতেই তার ক্যারিয়ারে বিরাম চিহ্ন পড়ে যায়। কোচের পছন্দের পাত্র হতে না পারায় তার ক্যারিয়ারটা আর সামনে এগোয়নি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৫-১০, ৫ বছর। ম্যাচ: ৬ টেস্ট, ৫২ ওয়ানডে ও ৮ টি-টোয়েন্টি

তালহা জুবায়ের: বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আফসোসের নামের মধ্যে তালহা জুবায়ের একজন। হুই-হুল্লোড় ফেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছিলেন তিনি। গতিতে ছিলেন দুর্দান্ত, লাইন লেংন্থও ছিল দারুণ। এ কারণে ১৬ বছর বয়সেই তার টেস্ট অভিষেক হয়ে যায়।

এত কম বয়সী বোলারের বোলিং দেখে প্রতিপক্ষরা পর্যন্ত চমকে যেত। এ কারণেই মাশরাফি ও তালহাকে ভালোভাবে যত্ন নেওয়ার জন্য বলে গিয়েছিলেন অ্যান্ডি রবার্টস। বিশ্ব ক্রিকেটের অনেকেরই ধারণা ছিল, দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সেবা দিতে পারবেন তালহা। মাশরাফি ও তালহার জুটিতে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ নতুনত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা জেগেছিল।

যদিও সেটা হয়নি। ইনজুরিতে পড়ে সব ভেস্তে যায়। ইনজুরিতে পড়ার পর বোর্ড থেকে তাকে সেভাবে যত্ন করা হয়নি। পাশাপাশি তালহা নিজেও সেভাবে চেষ্টা করেননি। যে কারণে মাত্র ৭ টেস্ট ও ৬ ওয়ানডে খেলেই থামতে হয় তাকে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০২-০৪, ২ বছর। ম্যাচ: ৭ টেস্ট ও ৬ ওয়ানডে

এই একাদশের বাইরেও অনেক ক্রিকেটার আছেন, যাদের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় সেবা পেতে পারতো বাংলাদেশ ক্রিকেট। একইভাবে তুষার ইমরান, ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, নাজিম উদ্দিন, জুয়ায়েদ সিদ্দিকী, নাজমুল হোসেন, রবিউল ইসলাম শিবলু, নাঈম ইসলাম, মার্শাল আইয়ুব, সোহরাওয়ার্দী শুভরাও হতে পারতেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্পদ। কিন্তু এদের কেউই সম্পদে পরিণত হতে পারেননি। স্বপ্ন বহুদূরে থাকতেই শেষ হয়ে গেছে তাদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।

 

-ইন্টারনেট