সেন্ট মার্টিন বিলাসে অনলাইন আবেদন ও মিয়ানমারের দু:সাহস

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২২
সারোয়ার মিরন:
২০০৩ সাল থেকে ভ্রমনের উদ্দেশ্যে তিন বার পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার গিয়েছি। তিন বারের একবারও সেন্টমার্টিন যাওয়া হয়নি ইচ্ছে করেই। একটা বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের অভিপ্রায়ে এ না যাওয়ার কারন। অবশ্য এখনো যাওয়া হয়নি উদ্দেশ্যটা হাসিল না হওয়ার অযুহাতে।
বঙ্গোসাগরের বাংলাদেশ সীমানায় বাংলাদেশের জলঘেরা স্বাধীন ভূখন্ড কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন যেতে হলে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। অনলাইনে করা আবেদন গৃহীত হলে সেখানে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। সিস্টেম অনেকটা অনলাইনে ডিভি কিংবা ভিসা আবেদন করে বিদেশ যাওয়ার মতো ব্যাপার স্যাপার। অবশ্য মাস দুয়েক আগে সেন্টমার্টিনে যাওয়া পর্যটকদের জন্য রাত্রি যাপন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। রাত্রি যাপন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে। উচ্ছেদ করা হবে হোটেল মোটেল এবং বিভিন্ন স্থাপনাও।
বরাবরই প্রসাশনযন্ত্র সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য্যহানী এবং পরিবেশ দূষনের কারন উল্লেখ করে এ সকল হঠসিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্যাপারটা মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো বিষয়। প্রতিকার কিংবা প্রতিরোধ না করে একেবারেই নিষিদ্ধের খড়্গ।
প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের আধার একমাত্র প্রবাল দ্বীপ বাংলাদেশের গর্ব। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের একমাত্র আকর্ষন এ দ্বীপ সেন্টমার্টিন। কক্সবাজার যাওয়া মানেই সেন্টমার্টিন যাওয়া। সাথে আছে স্বচ্ছ জলে বিলাসবহুল লঞ্চভ্রমনের অপার আনন্দ উপভোগের সুযোগও। আমাদের এ প্রাকৃতিক সম্পদের সুচারু ব্যবহার এবং এর রক্ষনাবেক্ষনের নামে এখানে যাতায়াতে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দারুন ভাবে আহত করে আমাকে।
উল্লেখ্য যে, সাপ্তাহ খানেক আগে সরকার ঘোষনা দিলো সেন্টমার্টিন যেতে হলে করতে হবে অনলাইনে আবেদন । এরও মাস দুয়েক আগে ঘোষনা দেয়া হলো ওখানে রাত্রী যাপন নিষিদ্ধ। সরকারি এ সকল ঘোষনার খুব কম সময়ের মধ্যে বর্মী রাষ্ট্র মিয়ানমার সেন্টমার্টিনকে নিজেদের বলে দাবি করে মানচিত্র ছেপেছে। না পাঠক, আমি এসব ঘটনার কোনটার মাঝেই যোগসুত্র খুঁজতে চাই না। আমি চাই জানতে যে, একটি স্বাধীন দেশের ভূখন্ড কিভাবে অন্য একটি পিচাশ রাষ্ট্র নিজেদের বলে ঘোষনা দিতে পারে!! কিভাবে সম্ভব এমন দৃষ্টতা দেখানো!!! ইতপূর্বে মিয়ানমারের বিভিন্ন সামরিক উড়োজাহাজ বিশ বারেরও বেশি সময় বাংলাদেশের আকাশ সীমানায় প্রবেশ করেছে আন্তর্জাতিক আকাশসীমা আইন লংঘন করে। এ বিষয় গুলোতে সংশ্লিষ্ট্যদের যথেষ্ট ভাবনার অবকাশ আছে বলে মনে করি।
আচ্ছা সরকার অন্য কোন বিকল্প উপায়ে প্রবাল দ্বিপ সেন্টমার্টিন নিরাপদ রাখার প্রকল্প না নিয়ে নিষেধাজ্ঞা কিংবা অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়া চালু করতে গেল কেন!!! দেশের নাগরিক হিসেবে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে হলে আবেদন করে অনুমতি নেয়া লাগবে কোন দু:খে!!! বিশ্বব্যাপী ভ্রমন/গমন প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য পার্সপোর্টসহ অন্যান্য জটিলতা যেখানে পরিহার করা হচ্ছে সেখানে দেশের অভ্যন্তরের যাতায়াতে তবে কেন এ খড়্গ? তবে কি মিয়ানমারের দু:সাহসের উৎস এখানেই নিহিত!!
প্রবাল দ্বিপ সেন্টমার্টিন আমাদের সম্পদ। বিশ্ব ঐতিহ্য। এখানে কোন কালো শকুনের থাবা পড়ুক তা দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা কেউই চাই না। এ দ্বিপ ভ্রমন সহজতর করে বিকল্প উদ্যোগ নিয়ে এর বাসযোগ্যতা ও পরিবেশ রক্ষার আহবান জানাই।
(উল্লেখিত লেখাটি ২০১৮ সালে হলেও বর্তমানেও এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সম্প্রতি প্রতিবেশি রাষ্ট্র মিয়ানমার বাংলাদেশের ভৌগলিক ও আকাশ সীমানা লংঘন করে বিভিন্ন ভাবে উসকে দিচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুটিকেও জিইয়ে রাখছে। আমরা মিয়ানমারের এ ঔদ্যতপূর্ন আচরনের তীব্র নিন্দা জানাই।)
-লেখক
 প্রকাশক ও সম্পাদক, দেশালোক ডটকম