লক্ষ্মীপুরের গর্ব

একুশে পদক প্রাপ্ত  বরেণ্য ব্যক্তিত্ব সানাউল্লাহ নূরী  

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৪:৪৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২০

দেশালোক ডেস্ক: দেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক ও বরেণ্য লেখক-গবেষক সানা উল্লাহ নূরী। সানাউল্লাহ নূরী ২৮ মে ১৯২৮ সালের  লক্ষ্মীপুরজেলার রামগতি থানার চর ফলকনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুহম্মদ সালামতউল্লাহ।

তিনি ১৯৪৭ সালে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময় তিনি বামছাত্র রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় যোগ দেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা কলেজের নুরপুর ভিলা ছাত্রাবাসে “রাট্রভাষা বাংলা না উর্দু” নামক সেমিনিারে তিনি যোগদেন। “১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনর তিনি অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন।” তার শৈশব শিক্ষা শুরু হয় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার হাজিরহাট জুনিয়র এ্যাংলো ইংলিশ এ্যারাবিক মাদরাসায়। এরপর তিনি সাবেক নেত্রকোনা জেলার ময়মনসিংহ স্কুলে ভর্তি হয়ে শেষ পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্টিকুলেশন পাশ করেন।

১৯৯৪ সালে যোগদানের পর ১৯৯৭ সালের মে মাস পর্যন্ত দৈনিক দিনকালের সম্পাদক পদে দায়িত্বপালন করনে সানা উল্লাহ নূরী। এর আগে দৈনিক জনতা (১৯৮৭) সম্পাদক, নিবাহী সম্পাদক দৈনিক দেশ (১৯৭৮), দৈনিক কিশোর বাংলা, নিবাহী সম্পাদক দৈনিক গনবাংলা (১৯৭২), দৈনিক বাংলা, দৈনিক পাকিস্তানের (১৯৫২) বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৫৮ সালে দৈনিক ইত্তেফাক ,১৯৬০ সালে মাসিক সওগাত পত্রিকায় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেন সানা উল্লাহ নূরী। ১৯৪৮ সালে দৈনিক আজাদ এবং ১৯৫২ সালে দৈনিক আজাদ ছেড়ে দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দিয়ে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সংবাদে থাকেন। ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের মূখপত্র “অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা ইহসানের” সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্বের মধ্য দিয়ে শুরু করা সাংবাদিকতা দিয়ে তিনি টানা ৫০ বছর সাংবাদিকতা করেন।

১৯৮৮ সালে গঠিত “বাংলাদেশ কাউন্সিল অব এডিটরস” এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সানা উল্লাহ নূরী।

সানা উল্লাহ নূরী ১৯৮২ সালে সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় কৃতিত্বের জন্য একুশের রাষ্ট্রীয় স্বর্ণপদক পান। ১৯৯৩ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন স্মৃতি পরিষদের শিল্পাচার্য পদক পান।১৯৯৫ সালে পশ্চিম বাংলার “ড: দীনেশ চন্দ্র সেন গবেষণা পরিষদ” প্রদত্ত দীনেশ সেন স্বর্ন পদকে ভূষিত হন।

তিনি ৮টি উপন্যাস, ৭টি গল্প ও শিশুতোষ গ্রন্থ, ৩টি ভ্রমণ কাহিনী, ৪টি ঐতিহাসিক গ্রন্থ, সাংবাদিকতা বিষয়ে ২টি গ্রন্থ, রাজনৈতিক বিষয়ে ২টি গ্রন্থ, ২টি কাব্য গ্রন্থসহ ৬০টি গ্রন্থ রচনা করেন।উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা সম্পাদনা- আন্দার মানিকের রাজকন্যা, নিঝুম দ্বীপের উপাখ্যান, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা, নোয়াখালী-ভুলুয়ার ইতিহাস ও সভ্যতা, উপমহাদেশের শত বর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধ।

তার গ্রন্থ সমূহ:

উপন্যাস : ১. আনধার মানিকের রাজকন্যা, ২. নিঝুম দ্বীপের উপাখ্যান, ৩. রেহিঙ্গা কন্যা, ৪. আফ্রিকানা আমার বালবাসা, ৫. সোনার হরিণ চাই।

কাব্যগ্রন্থ : ১. আন্দোলিত জলপাই, ২. নিবেদিত পঙতিমালা, ৩. শান্তির পদাবলী।

শিশুতোষ রচনা : ১. বুদ্ধি শেখার গল্প, ২. মানুষ যাকে ভোলেনি, ৩. চীনা পুতুলের দেশে, ৪. বঙ্গোপসাগরের রূপকথা, ৫. রূপকথা দেশে দেশে, ৬. বোশেখ আসে পাগলা ঘোড়ায়, ৭. মেঘের নৌকায় চাঁদের দেশে।

অনুবাদ : ১. আদিগন্ত, ২. মোহক নদীর বাঁকে, ৩. স্বর্গের এ প্রান্তে, ৪. কর্নেল গাদ্দাফীর গ্রিন বুকের বঙ্গ ?নুবাদ, ৫. ভাষার বিবর্তনে সংবাদপত্রের ভূমিকা, ৬. বিশ্বের প্রথম রিপোর্টার।

বিবিধবিষয়ক গ্রন্থ : ১. বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা, ২. হি উংচাং যখন এলেন, ৩. নোয়াখালী ভুলায়ার ইতিহাস ও সভ্যতা, ৪. স্বাধীনতা বিপ্লবের মহানায়ক, ৫. উপমহাদেশের শতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৬. ইউরোপের পুনর্জাগরণে ইসলামের অবদান, ৭. মহানবীর বিশ্বচিন্তা, ৮. মহানবীর রাষ্ট্রদর্শন ও পররাষ্ট্রনীতি।

ভ্রমণ : ১. পৃথিবীর দেশে দেশে ভ্রমণ, ২. মহা প্রাচীরের কথা, ৩. লোহিত সাগরের দেশে, ৪. আমু দরিয়ার দেশে, ৫. হাজার এক রাতের দেশে, ৬. দারুচিনি দ্বীপের দেশে।

১৯৯৭ সালের মে মাস পর্যন্ত তিনি দৈনিক দিনকালের সম্পাদক পদে দায়িত্বপালন করার সময অসুস্থাতার কারণে জন্য দিনকাল এবং সাংবাদিকতা থেকে অবসর নেন সানা উল্লাহ নূরী। ২০০১ সালের ১৬ জুন ৭৩ বছরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮ জুন ২০০১ সালে ঢাকার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।