জাতিসংঘ ৭৫তম অধিবেশনে শেখ হাসিনা’র ভাষণের চুম্বক অংশ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২০

সায়েম মাহমুদ: ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার আয়োজিত ভার্চুয়াল সমাবেশে ২৬ শে সেপ্টেম্বর ২০২০ এ ১৭ তম বারের মত বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সমাবেশে বক্তৃতা প্রদান করেন-পূর্ব ধারণকৃত ওই বক্তৃতার চুম্বক অংশ বা সারমর্ম আমাদের আজকের এ লেখা করোনা মহামারীর কারণে চলমান অচলাবস্থার কথা উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেয়া ভাষণের স্মৃতিচারণ করেন।

চলমান সঙ্কট মুহূর্তে স্বাস্থ্যকর্মী সহ সকল সহযোগী এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং পূর্বের মতোই জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব প্রদানের আশা ব্যক্ত করেন। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবদান ও তার আদর্শের কথা উল্লেখ পূর্বক জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন যা করোনার কারণে মুখ থুবরে পড়েছে অনেকটাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববাসীর কাছে বসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর ভয়াবহতা তুলে ধরে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেদিকে সকলকে নজর দিতে আহবান করেন।

করোনাকালীন বিশ্বব্যাপী এই অচলাবস্থার কারণে বাংলাদেশে বিপর্যস্ত এবং এর মানুষজন সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে আছে উল্লেখ করে অবহেলিত নিপীড়িত মানুষের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১) মহান মুক্তিযুদ্ধাদের জগত প্রতিবছর ৩৯ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ ২) সমাজের অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচীর আওতায় ৯.১ মিলিয়ন পরিবার উপকৃত হচ্ছে ৩) চার মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে প্রতিবছর শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে ৪)১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র হকের ৩০ ধরনের ঔষধ বিতরণ করা হচ্ছে ৫)করোনার সমস্যা মোকাবেলায় ২১ ধরনের প্রভাব এর আওতায় ১৩.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা আমাদের জিডিপির প্রায় চার দশমিক শূন্য তিন(৪.০৩%) শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে. সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও “জীবন-জীবিকা দুই ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব প্রকল্প” বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবারও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও খাদ্য উৎপাদনে যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে যার ফলে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৪ শতাংশ।

বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনকে একটি জাতীয় সম্পদ এর পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সম্পদে রূপান্তরের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন আমাদেরকে মেধাস্বত্ব ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করলে আমাদের চাহিদা মোতাবেক ভ্যাকসিন তৈরি করার সক্ষমতা আমাদের আছে।এসময় তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ গড়তে শতাব্দীব্যাপী নানান পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন পাশাপাশি উন্নত দেশগুলো যাতে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তায় এগিয়ে আসেন সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন এর অঙ্গিকারের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশে নারীদের অবদান এবং নারী বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন যেখানে তিনি ৭২.৬% বৈষম্য কমিয়ে আনার পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ নারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার ঘোষণা দেন। সকলের প্রতি বন্ধুত্ব কারো প্রতি বৈরিতা নয় স্লোগানসমৃদ্ধ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির উল্লেখ করে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের আকুন্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশমে বর্তমানে সর্বোচ্চ সেনা পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন।

১৯৪৭-১৯৭১ সালের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নিপীড়িত মানুষের কষ্ট লাঘবে কাজ করে যাচ্ছি যার ফলে মিয়ানমারে চলমান জাতিগত নিধনের ফলে ১১ লাখ উদ্বাস্তু মানুষ আজ তিন বছর ধরে আমাদের দেশে অবস্থান করছে যে সমস্যা সমাধানে জাতিগত সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আহবান জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থান সবসময় বহুপাক্ষিকতার দিকেই থাকবে বলে আশা করেন।

পরিশেষে জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দরিদ্র ও শোষণমুক্ত এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র বিনির্মাণ মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার উল্লেখ করে শেষ করেন। জাতিসংঘ আয়োজিত প্রথম এ ভার্চুয়াল সমাবেশে দক্ষিণ এশিয়ার এ নেতা বিশ্বের শান্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আগামীর জন্য একটি আদর্শ গ্রহ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার আহ্বান করেন যেখানে সকলে সকলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে, গড়ে উঠবে একটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

 

লেখক: ইংরেজি সাহিত্যের সাবেক শিক্ষার্থী

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম