মনোনয়ন প্রত্যাহার করে যে বার্তা দিলেন ফরিদুন্নাহার লাইলি

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:০৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে (১৭ ডিসেম্বর) ‍আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি। ১৪দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল-জাসদ (ইনু) মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারেফ হোসেনকে ছেড়ে দিয়েছেন। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। নিজ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলগর) সংসদীয় আসনের সাধারন জনগন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তিনি। পাঠকের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল।

.

প্রাণপ্রিয় (লক্ষ্মীপুর-৪) রামগতি ও কমলনগরবাসী,

আসসালামু আলাইকুম।

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তব করার সূচনালগ্নে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধিত্ব করেছি। তিনি যেদিন থেকে আমার কাঁধে রামগতি ও কমলনগরের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেদিন থেকেই আমি এই এলাকার মানুষের সেবায় নিবেদিত থেকেছি, যা আজ অব্দি অব্যাহত রয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন আজ বাস্তব, আমরা এখন হাঁটছি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট লক্ষ্মীপুর গড়ার জন্য আমাদের কান্ডারি, আমার নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনীত করেছিলেন, তার জন্য আমি চির কৃতজ্ঞ। একই সাথে দেশে বিদেশে অবস্থানরত রামগতি-কমলনগরবাসীর প্রতি আমি ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, কারণ আমার প্রতি আপনাদের ভালবাসা, সমর্থন ছিল বলেই জনমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছিলেন এবং মনোনয়ন পাওয়ার পর আপনাদের বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ-উল্লাসে আমি গৌরবান্বিত হয়েছি।

আমার প্রতি আপনাদের এই উচ্ছ্বাস, আবেগ আমার জীবনের পরম পাওয়া। কথা দিলাম, এই ভালবাসার প্রতিদান হিসেবে আমি আজীবন আপনাদের পাশে থাকবো। আমি নৌকার কর্মী, নৌকার যোদ্ধা। নৌকায় সবসময় ভরসা রেখেছি এবং আমৃত্যু ভরসা রাখবো আওয়ামী লীগে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আমাদের প্রিয়নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার নিজের পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য। আর এই মানুষটি আমার উপর ভরসা রেখেছেন, এর চেয়ে বেশি সম্মান আমার পক্ষে পাওয়া সম্ভব না এবং আমি আজীবন নিজের স্থান থেকে নৌকার লোক হয়ে কাজ করে যাবো। প্রিয় রামগতি ও কমলনগরবাসী, আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা যে কোন পরিস্থিতিতে নৌকার সাথে থাকবেন।

দেশের স্বার্থে, দলের স্বার্থে জননেত্রী শেখ হাসিনা সবসময় যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেই সিদ্ধান্ত আমাদের মাথা পেতে নিতে হবে। সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুর-৪ উন্নত ও সমৃদ্ধ হতে পারে শুধুমাত্র নৌকার বিজয়েই। আপনাদের মনে রাখতে হবে এই নৌকা বঙ্গবন্ধুর নৌকা, এই নৌকা শেখ হাসিনার নৌকা। তাই নৌকা প্রার্থীর পক্ষে আমি, আমরা, সকলে ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকবো। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

আরো জানুন:

নিজ দলের প্রতিদ্বন্ধী সাত সাতজন মনোনয়ন প্রত্যাশিকে হটিয়ে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়া কে এই ফরিদুন্নাহার লাইলী? আওয়ামীলীগের সারাদেশে মনোনয়ন পাওয়া ১৮নারী প্রার্থীর মধ্যে কে এই প্রভাবশালী নারী? আসুন আজকের লেখায় তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
ফরিদুন্নাহার লাইলি ৯ম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত-১৮ (রামগতি-কমলনগর) আসনে দায়িত্ব পালন করেছেন নারী সাংসদ হিসেবে। সে সময় থেকেই রামগতি-কমলনগর এলাকায় তাঁর পদচারনা। দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি থাকলেও প্রার্থী হননি দলীয় নির্দেশনার কারনে।

সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত ফরিদুন্নাহার লাইলির বিশাল একটি অনুসারি রয়েছে এ অঞ্চলে। ১৯৫৪ সালের ১২ ডিসেম্বর নোয়াখালী সদর উপজেলার ০৩নং নোয়াইর ইউনিয়নের গোরিপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সালে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর বাবার নাম সাইদুর রহমান এবং মাতার নাম মাহামুদা বেগম। বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান তিনি।
স্থানীয় হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার পর ভর্তি হন কুমিল্লা উইমেন্স কলেজে। এই কলেজেই তার রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি। এখানেই ছাত্রলীগ কলেজ শাখার সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এইচএসসি পাশ করার পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক করা ফরিদুন্নাহার লাইলী এ সময় পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং শামছুন নাহার হল শাখার সভানেত্রীর দায়িত্ব।
১৯৮০-৮১ইং শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন একমাত্র ছাত্রীবাস সামছুন নাহার হলের ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভিপি পদে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক, দায়িত্বপালন করেছেন কেন্দ্রিয় মহিলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হিসেবে।
একই বিষয়ে মাস্টার্সও করেন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদিকা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তার স্বামীর নাম আকবর হোসেন। তাদের একমাত্র কন্যা এসএমএ জাফরী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী এর আগে দু দুবার কেন্দ্রিয় কমিটির ত্রান ও সমাজকল্যান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
গর্বিত এ নারী মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বশরীরে উপস্থিত থেকে নানান ভাবে সহায়তা করেছেন।
একজন সুলেখিকা এবং জাত বীমা বিশেষজ্ঞ ফরিদুন্নাহার লাইলি জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আজম্ম আওয়ামী রাজনীতির ধারক বাহক ও রাজপথের লড়াকু এ নারী পেয়েছেন তার প্রতিদান। তাঁর জন্য শুভকামনা। ধন্যবাদ

–তাঁর জীবনী নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র দেখুন: https://fb.watch/o_TexpAnvp/