মেঘনার ভাংগনে হুমকির মুখে রামগতি-কমলনগর

মেঘনায় অস্বাভাবিক জোয়ার- যে ক্ষতি বয়ে যাবে বহুদিন

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১:১০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২০

সম্পাদকীয়ঃ বর্ষাকাল। অমবস্যা- পুর্নিমা। ঝড় জলোচ্ছ্বাস, বন্যা- সিগনাল।প্রায়শই অস্বাভাবিক জোয়ার মেঘনা উপকূল জুড়ে। নোনা জলে প্লাবিত লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি -কমলনগর উপজেলার প্রায় ত্রিশটি গ্রাম। ভুক্তভোগী উপজেলা দুটির প্রায় অর্ধেক মানুষ।

জোয়ারের স্রোতে দেবে গেছে উপকূলীয় এ ত্রিশটি এলাকার চলাচলের প্রায় সবগুলো সড়ক। উঠে গেছে পিচ ঢালাই এবং সুড়কিও। চলাচলের অনুপযোগী পথ ঘাট এবং রাস্তা। ভেংগে বড় বড় গর্তে পরিনত হয়েছে জনবহুল সড়ক।

বহু মানুষের ঘর ভিটা দেবে গেছে। ভেসে গেছে। নষ্ট হয়েছে। ভিটা জুড়ে পানিতে থৈ থৈ অবস্থা। স্বল্প সময়ে ভাংগন কবলিত বহু পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর ভাবে বসবাস করছে।

উপকূলের প্রায় প্রতিটি হাট বাজারের দোকান পাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়েছে জোয়ার। তিন চার ফিট পানিতে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মালামাল। স্কুল কলেজ, মসজিদ মন্দিরও বাদ থাকেনি। সর্বত্র্যই পানি আর পানি! মোদ্দাকথা উপকূলের এসব এলাকার প্রায় সকল পরিবারই কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

রামগতি আছিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠসহ একাডেমিক ও অফিস কক্ষে হাঁটু সমান পানি। প্রধান শিক্ষক বিপ্লব মজুমদার অন্যান্যদের নিয়ে পানিতে ভেজা সরঞ্জাম ও মালামাল সরাচ্ছেন।

বালুরচর এলাকায় দেখা গেছে অনেক পরিবার ঘর ছেড়ে উঁচু জায়গায় থাকছেন। মুন্সিরহাটের ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন নিজ দোকানের মালামাল সরাচ্ছেন।

জোয়ারের তীব্রতা কমলেও রেখে গেছে তান্ডব চিহ্ন। দেবে যাওয়া ও হেলে পড়া বাড়িঘর, দোকানপাট মেরামত করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তবে রাস্তাঘাট গুলো জোয়ার পরবর্তী ক্ষত বহন করে চলেছে।

অস্বাভাবিক এ জোয়ারে মত্স্যচাষীরা সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন বেশি। ভেসে গেছে পুকুর জলাশয় ও মাছের প্রজেক্ট। কমলনগরে তাজ পোলট্রি ফার্মের এক ব্যবসায়ীর পাঁচ হাজার মুরগী মারা গেছে জোয়ারের পানিতে। এছাড়াও ভেসে গেছে কয়েকটি চিংড়ি ঘের।নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি, ধানচারা (রোয়া) ক্ষেত।

কমলনগরেও একই পরিস্থিতি। চরফলকন, লুধুয়া, পাটারির হাট, মাতাব্বর হাট, মতিরহাট, চরমার্টিনসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়ও জোয়ার তান্ডব বয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাতাব্বরহাট বেড়ীবাঁধ।

মেঘনা নদী শাষন, বেড়ীবাঁধ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও রাস্তাঘাট মেরামতের দাবিতে রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে কমলনগর নদী শাষন সংগ্রাম পরিষদ।

জোয়ার তান্ডবের এক সাপ্তাহ সময় পার হতে চললেও ক্ষতিগ্রস্তরা পাননি কোন সরকারি আনুকূল্য কিংবা কোন সাহায্য সহযোগিতা। রামগতি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ আবদুল মোমিন জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারি বরাদ্ধ পেলে সহযোগিতা করা হবে। জেলা প্রসাশকের সাথেও আলোচনা করা হয়েছে।

নিজ প্রচেষ্টায় পরিবার গুলো ঘুরে দাঁড়ানোর কাজ শুরু করলেও আরো বেশ কয়েকদিন মাস বছর ধরে বয়ে বেড়াতে হবে রাস্তাঘাট, বেড়ীবাঁধ, পুল কালভার্ট ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।

গতো তিন যুগ ধরে বৃহত্তর রামগতি (রামগতি-কমলনগর) যে ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছে সে ব্যথায় আরেকটি প্রলেপ দিয়েছে গতো সাপ্তাহের এ জোয়ার। স্থায়ী অবকাঠামোগত যে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি আমরা। তার জের বয়ে বেড়াতে হবে আরো অনেক দিন। অতীত ইতিহাস অন্তত তাই বলে।

(প্রথম ছবিটি রামগতির বিবিরহাট এবং দ্বিতীয় ছবিটি রামদয়াল- বিবিরহাট থেকে তোলা)