গল্পঃ ভিলেজ পলিটিক্স

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৮:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০

শাকিল সারোয়ার খানঃ কুসুমপুর গ্রামের দিনমজুর রহিম মিয়া তিন সন্তানের বাবা, বড় ছেলে করিম এবার দাখিল পাস করেছে।

অভাব অনটনের সংসার রহিম মিয়ার, ক্ষেতে খামারে কাজ করে কোনোমতে তিন ছেলেকেই পড়াশোনা করাচ্ছেন। বড় ছেলে করিমের স্বপ্ন কোনো ভাবে সে আলিম পাশ করলেই এলাকার এক বড় ভাইকে ধরে শহরে একটা চাকরি নেবে তারপর বাবার সংসারের হাল ধরবে।

কিন্তু এরমধ্যে দেশে চলে এল করোনা মহামারী রহিম মিয়ার এখন কোনো কাজকর্ম নাই তাই একদিন কোনোভাবে খেলে পরের দুইদিন উপোষ থাকতে হয় তার পরিবারের সদস্যদের, কারো কাছে কোনো সাহায্য ও পান নি রহিম মিয়া।

রহিম মিয়ার স্ত্রী জুলেখা বেগম একদিন রাগে দুঃখে বড় ছেলে করিম কে বললো তোরা বাপে পুতে চারজন থাকার পরও আমাকে কেন উপাস থাকতে হয় কামাই রুজি যখন করোস না তো মরে যাইতে পারোস না তোরা, এই কথা বলেই অজোরে কান্না করেন জুলেখা বেগম।

করিমের মায়ের কান্না করিমকে খুব কষ্ট দেয়, কে জানতো করিমের মায়ের সেই অভিশাপ একটু পরেই করিমের উপর লেগে যাবে।

মায়ের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য করিম কিছু একটা করবে ঠিক করেছে কিন্তু কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে, উপায়ন্তর না পেয়ে করিম গাছ থেকে আমড়া, পেয়ারা আর কামরাঙা পেড়ে বাজারে নিয়ে যায় বিক্রি করতে।

দুই ঘন্টায় ৬০ টাকা বিক্রি করে করিম খুব খুশি ভাবছে একশো টাকা বিক্রি হলেই এক কেজি চাল আর এক কেজি ডাল নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে, বাবা-মা আর ভাইদের নিয়ে একদিনের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

করিমের একশো টাকা ঠিকই বিক্রি হয়েছিল কিন্তু সেই টাকার খাবার সে বাবা-মা ভাইদেরকে নিয়ে খেতে পারেনি আর, মস্তকহীন দেহ করিমের বাড়ি ফিরেছে সাথে পাঞ্জাবির পকেটে একশো টাকা! আহ!

কুসুমপুর গ্রামেরই প্রভাবশালী ব্যক্তি জসিম মিয়া অঢেল সম্পত্তি তার প্রকাশ্যে সুদের ব্যবসা করেন তিনি, তার একমাত্র ছেলে কাসেম শহর থেকে গ্রামে এসেছে তার শখ হয়েছে সে ট্রাক চালাবে, জসিম মিয়া ছেলের ইচ্ছায় আপত্তি করলেন না।

প্রায় ২০ কি.মি ট্রাক চালানোর পর কাসেম কুসুমপুর বাজারের দিকে গাড়ি ঘুরাতে যাবে ঠিক এমন সময় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে সে, তার ট্রাক রহিম মিয়ার দাখিল পাশ ছেলে করিমকে ধাক্কা দিয়ে সোজা দেয়ালে থেতলে দেয়, মুহুর্তের মধ্যেই করিমের মাথা পিষে যায় দেয়ালের সাথে, এক নিমিষেই শেষ হয়ে যায় রহিম মিয়ার সব স্বপ্ন।

এলাকার স্থানীয় নেতারা একে একটা দুর্ঘটনা হিসেবে ধরে নিয়ে জসিম মিয়ার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করে রহিম মিয়াকে দিবে বলে কিন্তু রহিম মিয়া হাতে পান দুই লাখ, বাকি এক লাখ নেতাদের, তারা জসিম মিয়ার কাছ থেকেও আরো দুইলাখ আদায় করেন।

ছেলেকে হারিয়ে নিঃস্ব রহিম মিয়া পেলেন দুই লাখ আর মীমাংসা করে দিয়ে নেতারা পেলেন ৪ লাখ। আহারে ভিলেজ পলিটিক্স!

#করোনাডায়েরি (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
০৮.০৯.২০