বন্দে আলী মিয়া এবং ইসলামিক মিথ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

মোঃ আল আমিনঃ ‘বন্দে আলী মিয়া’ নামটার সাথে শৈশব যুক্ত। এ নামটা দেখলে মানসপটে একটা অপূর্ব সুন্দর ছোটো গ্রামের দৃশ্য ভেসে ওঠে, আর কিছুই ভেসে ওঠে না।

আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর,
থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর৷
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই,
এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই৷
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,
আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে বাঁচাইয়াছে প্রাণ৷
মাঠ ভরা ধান তার জল ভরা দিঘি,
চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি৷
আম গাছ, জাম গাছ, বাঁশ ঝাড় যেন,
মিলে মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন৷
সকালে সোনার রবি পুব দিকে ওঠে,
পাখি ডাকে, বায়ু বয়, নানা ফুল ফোটে৷

কিন্তু তিনি এ কবিতা ছাড়া আরও অনেক কবিতা, আরও অনেক গল্প, আরও অনেক উপন্যাস, আরও অনেক নাটক নাটিকা, আরও অনেক প্রবন্ধ, আরও অনেক কিছুই লিখেছেন।
“কুরআনের গল্প” নামে একখানা বইও লিখেছেন। কয়েক দিন আগে বইটা নিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। অনেকে তা দেখেছেন। বইটা পড়ে এখন মনে হচ্ছে এ পোস্ট দেওয়া উচিৎ হয়নি। এ বইটা না পড়াই উচিৎ। এ বইটার প্রচার-প্রচারণা চালানো অন্যায়। কেন?

বইটাতে ১৫ টা গল্প আছে। ১৫ টা গল্পই চমৎকার। রূপকথার বা পৌরাণিক গল্পের মতো। এগুলো কুরআনের গল্প নয়; এগুলো বাইবেল বা ইসরাঈলী রেওয়ায়ত গল্প। যেমন, ‘আদি মানব ও আজাযিল’ গল্পে ইবলিসের জন্ম বিত্তান্ত, জ্ঞান গরিমা, ইবাদত বন্দেগির বিস্তারিত বর্ণনা দেখতে যায় যা কুরআন তন্নতন্ন করে খুঁজে পাইনি। এমনকি সহীহ্ হাদিসেও পাইনি । কুরআনে উল্লেখ আছে যে, ইবলিস জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত। আদমকে সাজদা করার নির্দেশ অমান্য করে সে অভিশপ্ত হয়। আর কিছুই নেই!

‘স্বর্গ চ্যুতি’ গল্পে শয়তান সাপের বেশ ধরে হাওয়া (আ) কে প্ররোচিত করেন। যার ফলে তিনি গন্দম খান। তারপর আদম কে প্ররোচিত করেন। এজন্য নারীকে জন্মগতভাবে অপরাধী বলে গণ্য করা হয়েছে। কুরআন হাদিসে এভাবে কোথাও বলা হয়নি। কুরআনে সর্বদা ফল ভক্ষণের জন্য আদমকে দায়ী করা হয়েছে। উল্লেখ, কুরআন হাদিসে কোথাও গন্দম ফলের নাম নেই।

‘শাদ্দাদের বেহেশত’ সম্পূর্ণ গল্পটা বানোয়াট ভিত্তিহীন। কুরআন বা হাদিসের কোথাও শাদ্দাদ সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ নেই।

এভাবে দেখা যায় অধিকাংশ গল্পগুলো জাল ও ভিত্তিহীন। কুরআন হাদিসের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

পরিস্কার কথা যে কুরআন হাদিসে নবী রাসূলগনের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। কয়েক জন নবী রাসূলের জীবনের শিক্ষণীয় কিছু দিন শুধু আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের দেশের প্রচলিত “কাসাসুল আম্বিয়া” ও বিভিন্ন নবীর জীবনী বিষয়ক পুস্তকাদিতে যা কিছু লিখা হয়েছে তার অধিকাংশই জাল, ভিত্তিহীন ও ইসরাঈলী রেওয়ায়ত।

লেখকঃ

শিক্ষক, নোয়াখালী