রাষ্ট্রের দায়িত্ব শিক্ষকদের জীবনমান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:২৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৭, ২০২০
মারজান আক্তার: অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে এদেশের শিক্ষকরা বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকরা রাষ্ট্রের কাছে থেকে সবচেয়ে বেশি নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরকে উচ্চ শিক্ষার সোপান ধরা হয়। যার ৯৫% এর বেশি পরিচালিত হয় বেসরকারি ভাবে। এসব বেসরকারি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে তাকে সমাজের উপযোগী করে তোলে এবং যার বিনিময়ে তাঁরা সরকার থেকে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্প সম্মানি পান।
এসডিজি গোল অর্জন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য শিক্ষার উন্নতি প্রয়োজন। শিক্ষার উন্নতি তথা আধুনিকীকরণ না হলে কোন দেশ উন্নত হতে পারে না। এ শিক্ষার একটা অত্যাবশ্যকীয় অংশ শিক্ষক। যার দায়িত্ব নিতে হয় রাষ্ট্রকে। আমাদের দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারির তুলনায় বেসরকারি শিক্ষক(৯৫%) বেশি। সরকারি বেসরকারি(এমপিওভুক্ত) শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত জীবনমান ও আর্থিক নিরাপত্তা তথা প্রাপ্ত সম্মানীর প্রতি অসন্তোষ যেমন-
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী –
একজন পাবি শিক্ষক তৈরি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন হয় রাষ্ট্রের টাকায় (এরা বেশির ভাগই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আবার অনেকে প্রাথমিক এবং উচ্চ শিক্ষা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষা জীবন শেষ করে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন কেউ বিসিএস দিয়ে বা অন্য কোন চাকরি নিয়ে দেশে কেউ আবার বিদেশ চলে যান বিলাসবহুল জীবন যাপনের জন্য)। আমরা খুব ভালো করে জানি রাষ্ট্রের এ ব্যয় এর টাকা আসে সাধারণ জনগোষ্ঠী হতে। তারমানে সহজ হিসাব সাধারণ জনগণের টাকায় বিশ্ব যোগ্য মানুষ হয়ে সাধারণ জনগণের ঋণের দায় অস্বীকার করে বিলাসবহুল জীবন যাপনের জন্য বিদেশ পাড়ি জমায়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তারা বিদেশ উচ্চ ডিগ্রি নেয়াকালীণ সময়েও দেশের সর্বোচ্চ সুযোগ (সা জন টাকায় পাওয়া) ভোগ করেও ডিগ্রি নেয়া শেষ হলে দেশের ও সাধারণ জনগণের ঋণের দায় ভুলে গিয়ে স্ব পারিবারে বিদেশে চলে যান। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীরা যে এমন কাজ করছে তা মাসুদ আলম- ৫ জুলাই ২০২০ তারিখ এফবিতে মেধা পাচার নিয়ে একটি আর্টিকেলে সুন্দর করে তুলে ধরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিক্ষকগণ দেশের সর্বোচ্চ সুযোগ ভোগ করে পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পাঠদারত থাকেন ও আরো নানাবিধ কাজের সাথে জড়িত থাকেন (৯ই আগষ্ট ২০২০ অন্য প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুমতি লাগবেঃ ইউজিসি) তারপরও যখন আরো বেশি সুবিধা পাচ্ছেন তখনই দেশের ও সাধারণ জনগণের ঋণের দায় ভুলে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। আমার লাগছে এ জন্য উনারা বিশ্ব উপযোগী হয়েছে যাদের টাকায় যখন সময় এসেছে তাদের জন্য কাজ করার ঠিক তখন সেই মেধা অন্য দেশ নিয়ে সুনাম কুড়াচ্ছেন। আমার দেশ এই মেধা গড়েছে এই দেশ কি পাচ্ছে? আপনারাই বলেন। মেধাগুলো ধরে রাখতে পারত কে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী ওনারা দেশের সর্বোচ্চ সুবিধার ভোগ করে সন্তুষ্ট নয়। তবে তাদের সন্তুষ্ট করে ধরে রাখার দায়িত্ব কার ছিল রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যদি দেশে সেরকম করে চলে যাওয়া মেধাগুলোর জীবনমান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করত তাহলে তাঁরা নিশ্চয়ই যেতেন না আর এতে দেশ ও দেশের সাধারণ জনগণ লাভবান হতো।
একইভাবে রাষ্ট্র প্রদত্ত শিক্ষকদের সম্মানীতে সরকারি শিক্ষকদের মাঝে যতটা অসন্তোষ রয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাঝে তার কয়েক গুণ বেশি অসন্তোষ। যার মধ্যে বেসরকারি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকরাই বেশি লাঞ্চনার স্বীকার। দেখছি সহকারী শিক্ষক পদে একজন শিক্ষক যোগদান করলে তাঁর বেতন হয় বার হতে তের হাজার যা বর্তমান দৈনিক শ্রমিকের মজুরির চেয়ে অনেক কম। শিক্ষক যদি তার পেটে ক্ষুদা রেখে পাঠদান করতে আসে, অসুস্থতার চিকিৎসা না করতে পেরে পাঠদান করতে আসে অর্থ্যাৎ তাঁর ও তাঁর পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে আর্থিক অনটন মাথায় রেখে পাঠদান করতে আসে কি দেতে পারবে কতটা দিতে পারবে শিক্ষার্থীদের আলোকিত করতে । এইজন্য সকল শিক্ষক নয় অনেকে প্রাইভেট পড়ায়, কোচিং করায় অন্যান্য কাজের সাথে জড়িত থাকেন। তারা আর্থিক অনটনে নিরুপায় হয়ে করেন। কারন বেঁচে থাকলে(কিছু মৌলিক প্রয়োজন পূরণ ফরজ) শিক্ষক বলে যাদু বলে ওনার মৌলিক প্রয়োজন পূরণ হয়ে যাবে না পূরণ করতে লাগবে অর্থ। যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র সেরকম করে তাঁদের জীবনমান ও আর্থিক নিরাপত্তা দিত তাহলে তাঁরা শুধু শিক্ষার্থীদের আলোকিত করার কাজেই ব্যস্ত থাকতেন ওনাদের মনে কোন কাজের কথা বা অসন্তোষ থাকত না।
আরো আছে বেসরকারি কলেজে শতভাগ বৈধ ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত অনার্স মার্স্টাস এর শিক্ষক যারা সম্মানি হিসেবে ৩০০০-৯০০০ টাকা প্রতিষ্ঠান হতে পেয়ে শিক্ষার্থীদের আলোকিত করে চলছে দীর্ঘ ২৮ বছর। সরকার এদের এমপিওভুক্ত করছে না। আর্থিক অনটন মাথায় রেখে পাঠদান অব্যাহত আছে ?
আছে অসংখ্য নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যারা এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় থেকে পাঠদান করছে। অভুক্ত থেকে, আর্থিক অনটন মাথায় রেখে পাঠদান অভ্যাহত আছে ?
রাষ্ট্রকে বলতে চাই উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি (সিঙ্গাপুর, হংকং, দ কোরিয়া, জাপান ইত্যাদি) তাদের উন্নত দেশে পরিণত করেছে। এসব দেশে শিক্ষকদের পূর্ণ দায় রাষ্ট্রের। আমার দেশ কি করছে? শিক্ষকদের পূর্ণ দায় যতদিন রাষ্ট্র না নিবেন ততদিন মানসম্মত শিক্ষার উন্নতি যেমন আশা করা যাবে না দেশ উন্নত হবে ডিজিটাল হবে সেটাও আশা করা যাবে না। কারন আমি মনেকরি “মানসম্মতভাবে শিক্ষাই একটি জাতির উন্নতির মেরুদণ্ড”। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অন্যান্য উপকরণের সাথে চাই দক্ষ, অভিজ্ঞ শিক্ষক ও তাঁদের অর্থনৈতিক অভাব মুক্তি।
তবে শিক্ষকদের আছে সম্মান তাও আগের মতো না আর এ সম্মান দিয়ে তো মৌলিক প্রয়োজন মিটে না। তাই শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জীবন আলোকিত করে বিশ্ব মানের উপযোগী করবে আর এসব শিক্ষকদের সকল প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নিবে রাষ্ট্র। এতে থাকবে না শিক্ষকদের মধ্যে কোন অসন্তোষ , নিশ্চিত হবে মানসম্মত শিক্ষা। শিক্ষার্থীদের আলোয় উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়ে হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
-লেখক: প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান ও এমফিল গবেষনারত