রম্যঃ আলু নয়, হাওয়া খেয়ে বাঁচবো!

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২০

সারোয়ার মিরনঃ আরে ভাগনে আলুর সিজনে তো আসছ নাই! যা আসলি আনসিজনে! আলু দিয়া মাত্র বাইশ পদ রানছি। পেট ভইরা খা!

– মামি পদ গুলো কিয়া কিয়া?
– এ ধর, আলুর ভর্তা, আলুর ডাল, আলুর দম, আলু ভাজি, আলু দিয়া আলু, হুদা আলুর পেঁয়াজু, আলুর ছপ, আলুর দো পেঁয়াজু, আলুর স্টিক, আলুর চিপস্, আলুর কাসুন্দি, আলুর রেজালা……..!

আলু নিয়া এটা একটা কৌতুকামাত্র! স্বাধীনতার পর থেকে আলুর দাম এখন সর্বোচ্চ! চারিদিক এখন আলুময়! আলুর আলোয় আলোকিত!! আলু এখন রীতিমত রাজা বাদশাহী খাবার! আহ আলু কি স্বাদ!

অনেক রথি মহারথিরা আলু খান না গ্যাস্ট্রিকের ভয়ে! আমি অবশ্য প্রচুর খাই। আলু দিয়ে সব খাই। সবচেয়ে ভালো লাগে কই মাছ দিয়ে আলু রান্না তরকারি। ঝোল থাকে, বাসি হলে তো দ্বিগুন স্বাদ!! আহ!

পড়ালেখা ও চাকুরী জীবনের বেশির ভাগ অংশই কেটেছে মেস লাইফ! মেস মানেই আকুর গোডাউন! সকালে, দুপুরে, রাতে সবসময়ই আলুর জোগান। সেসময় চৌকির তলায় আলুর গোডাউন থাকতো! মেসে থেকে আলুর ভর্তা বানাতে শেখেনি এমন মানুষ পাওয়া দূরুহ ব্যাপার। বেশি সদস্য সংখ্যা হওয়ায় আলুর আমদানি বেশি থাকতো মেস গুলোতে। সহজলভ্য, দামে কম, তরকারি হিসেবে কাটতেও সময় কম লাগতো। তাই ব্যাচেলরদেরও প্রিয়। বুয়া’র তো আরো প্রিয়। আলু ছাড়া তার চলেই না!

এক সময়ে সেনা শাসনামালে জেনারেল মইন উদ্দিন আহমেদ চালের দাম বাড়ছে দেখে কইছিলো, বেশি করে আলু খান, ভাতের উপর চাপ কমান। তখন চালের দাম উচ্চ থাকলেও আলুর দাম ছিলো নিতান্তই কম। আমার মতো চা-পোষা মানুষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলতেই পারেন। আলুর দাম কম, কিনতেও বেগ পেতে হবে না।

দেশে একটা টেন্ড চালু আছে! কোন কিছুর দাম বেশি হলে সেটা ধনীদের খাবার বলে মনে করা হয়! কমলে গরীবদের! এ যেমন আটা, রুটি করে গরীবরা খেলে পেটের ক্ষুধায় আর ধনীরা খেলে টিফিন! এমন ধরা যায়, টমেটো, করলা, গাজর, ইলিশ, শসা ইত্যাদি।হাল আমলে আলুও সেই মহান কাতারে শামিল হলো।

গতো কয়েক মাস আগে পেঁয়াজের দাম হিমালয়ের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে দু মাস পেঁয়াজ খাইনি। এখনো দাম সেই লেবেলে থাকায় খাওয়া কমিয়েছি। আলুও তাই। দাম বাড়লে খাবো না। খাইওনা। কোন ক্ষতি নেই। এই যেমন আমরা, গরুর গোস্ত খাইনা, ইলিশ খাইনা, খাসিও খাইনা, আন সিজনে টমেটো, শসা কিংবা গাজরও খাইনা! তো কি হয়েছে? কিচ্ছু না।

বাজার জুড়ে তরু তরকারির দাম আকাশ ছোঁয়া। পেয়াজ ১০০, বেগুন ১৫০, আলু ৬০ টাকা। মোট কথা ৬০ টাকার নিচে কোন সবজিই বাজারে নেই! ফাঁক ফোকর গলিয়ে চালের দামটাও বেড়েছে! বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও!

গোস্ত খাবো না, মাছ খাবো না – মানলাম। মেনেও নিলাম! কিন্তু, চাল (ভাত) না খেয়ে কিভাবে বাঁচবো! ভাতের বদলে আলুও বা কিভাবে খাই! আলুও যে এখন বাদশাহী আইটেমে পৌছেছে। হে আল্লাহ, হাওয়া খেয়ে বাঁচার তওফিক দেও।

লেখকঃ

সম্পাদকঃ দেশালোক ডটকম