ইন্টারনেট নির্ভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে কিছু কথা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:১৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২০

মারজান আক্তার:  বর্তমান প্রযুক্তির যুগের কম্পিউটার ভিত্তিক প্রযুক্তির খুবই জনপ্রিয় একটি যোগাযোগ প্লাটফর্ম। যার সাহায্য আমরা খুব সহজে, কম খরচে, স্বল্পতম সময়ে দ্রুত একে অন্যের সাথে যোগাযোগ বা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, ইনস্টগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি আর এগুলো ব্যবহার করতে প্রয়োজন ইন্টারনেট। ইন্টারনেট সারা বিশ্বকে একটা ‘গ্রাম’ বানিয়ে দিয়েছে সেটার উদ্দেশ্য ছিল ভালো, তথ্য আদান-প্রদান সহজীকরনের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন করা। বলা হয় ‘যা নাই পাতালে তা আছে গুগলে’। এখানে রয়েছে ভালো ও খারাপ তথ্যের বিশাল ভান্ডার। ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য সাইট করা জল খাওয়ার মত সহজ।

১৯৬৯ সালে যাত্রা শুরু করে ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ বিলিয়নের বেশি এবং বাংলাদেশে এর ব্যবহারাকারীর সংখ্যা ১০কোটি ৩৪ লাখের বেশি ৬২% যুগান্তর-১লা নভেম্বরে ২০২০। টুইটার ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে এর অক্ষর ২৮০। কালের কন্ঠ- ২রা ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৩ কোটি ২০ লাখ। লিংকডইন ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করে ১লা নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২২৫ মিলিয়ন – বণিক বার্তা। ফেসবুক ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে ৩১ অক্টাবর ২০২০ নাগাদ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৫০ কোটি, প্রতিদিন ব্যবহার করে ১৬৬ কোটি – বাংলাদেশ প্রতিদিন। বাংলাদেশে ৩ কোটির বেশি লোক ফেসবুক ব্যবহার করছে। ইউটিউব ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে এর সাবস্ক্রাইব সংখ্যা ১০৫ মিলিয়ন। ১লা নভেম্বর ২০২০ এক প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রতি মিনিটে ১৩০ কোটি এটি ব্যবহার করে।

এসব সামাজিক যোগাযোগ সাইটের ব্যবহার নিয়ে আমার ক্ষুদ্র অবজারভেশন এ জানতে পারি-

১.বাস্তবে তেলওয়ালার মাথায় যেমন তেল দিতে অন্ধের মত অনেককে দেখা যায় এখানেও সেটা দেখা যায় তেলওয়ালা অনেক চিলি বিষয় লিখলেও সেখানে লাইক, কমেন্টসে টইটুম্বুর হয়ে যায়।

২. গুরুত্ব না বুঝেও লাইক, কমেন্টস করার প্রবনতা দেখা যায়।

৩. গুরুত্বপূর্ণ বা তথ্যপূর্ণ বিষয়ে উপেক্ষা করা

৪.কেউ কোন বিষয় তার পেজে লিখলে তার মধ্যে লাইক, কমেন্টস না হলে বা কম পড়লে উদ্বিগ্ন হতে শুনেছি।

৫. লাইক, কমেন্টস বেশি হলে গর্ববোধ করতেও শুনেছি।

৬. এটাও দেখেছি যেখানে লাইক, কমেন্টস যত বেশি সেখানে সামাজিক যোগাযোগ সাইটেের বন্ধুর সংখ্যাও বেশি (কয়েক হাজার হতে দেখা যায়)।

৭.যারা অধিক আত্মসম্মান বোধের অধিকারি তারা কথায় কথায় অন্য আইডির সাথে সংশ্লিষ্ট হয় না, লাইক, কমেন্টসও কম করে

৮. একটা শ্রেণি এই সাইটগুলো ভালো কাজে ব্যবহার করলেও খারাপ কাজে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি বলে আমার অনুমান ইত্যাদি।

আমার অভিমত হল পেজের মাধ্যমে আমি/আপনি যখন কোন তথ্য অন্যকে জানাতে চাই তখন সেই তথ্য আমার/আপনার আইডির সাথে সংশ্লিষ্টরা ঐ তথ্য জানাটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ লাইক কমেন্টেস করাটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা ‘ভিন্নতা মানুষের সহজাত অভ্যাস’। আপনি/আমি যে উদ্দেশ্য বা গুরুত্ব নিয়ে লিখাটা পোস্ট করি তার গুরুত্ব অন্য ব্যবহারকারী উপলব্ধি নাও করতে পারে। আর উপলব্ধি করতে পারলেও ইচ্ছাকৃত লাইক, কমেন্টেস করেনি (এটা একান্ত ব্যক্তিগত ও গুরুত্ব বোঝার বিষয়) এমনও হতে পারে।

অর্থ্যাৎ আমি বলতে চাই লাইক, কমেন্টস কোন বিষয় না তথ্য জানাতে পারাটাই মূল বিষয়। একজন মানুষের পক্ষে সব তথ্য সাইট করা কখনও সম্ভবপর নয়। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা অনেকে পরষ্পর সংযুক্ত থাকলে সকল ধরণের তথ্য একজনের পক্ষে অল্প সময়ে ও কম ব্যায়ে জানা সম্ভব হয়ে ওঠে। তার জন্য যেমন হাজার হাজার সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহারকারীর সাথে সংশ্লিষ্ট হতে হবে এমন কোন কথা নেই, তেমনি সচল অল্প সংখ্যক ব্যবহারকারির সাথে যোগাযোগ হলেও সমস্যা নেই কেননা একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ও আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য সকল তথ্য জানাও জরুরি নয়।

যারা এখনও বুঝতেছেন না তাদের জন্য বলছি ফেসবুক বা উপরের উল্লেখিত মাধ্যম গুলো “সামাজিক যোগাযোগ সাইট যাতে সমাজ কেন্দ্রিক বিষয় গুলোর গঠনমূলক আলোচনা সমালোচনা ইতিবাচক নেতিবাচক বিষয়গুলো উপস্থাপিত হবে যা সমাজের মানুষের কাছে কম খরচে ও খুবই অল্প সময়ে পৌঁছে যাবে। যার প্রেক্ষিতে সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে”। আমি যদি ভুল না করি তবে মনে হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষই সামাজিক যোগাযোগের এ সাইটি ব্যবহার করছে বিনোদন ও ব্যাক্তি কেন্দ্রিক প্রর্দশনীর স্থান হিসেবে। যা কতটা যৌক্তিক আমার বোধগম্য নয়।

এছাড়াও আমার আরও যা মনে হয় রেডিও, টেলিভিশন (বিনোদনের জন্য ঠিকই নেয় ), পত্রিকা ও অন্যান্য সংস্থা জনগুরুত্বপূর্ণ যে তথ্য প্রচার করে (বিবিএস ২০১৮) ১৬কোটি ৪৮ লাখ জনগণের মধ্যে কয়জন সেই তথ্যটাকে মনোযোগ সহকারে শুনে এবং আমল করে বলেন তো? মানুষের সা যো সা ব্যবহার করা দেখে সামাজিক যোগাযোগ সাইটাগুলোকে আমার সেরূপই মনে হয় কেননা এখানে বেশির ভাগ সময় সিলি কোন বিষয় উপস্থাপন করা হলে লাইক কমেন্টস শেয়ার এর অনেক ছড়াছড়ি দেখা যায় কিন্তু কোন গুরুত্বপূর্ণ বা কল্যাণমূলক বিষয় যা আল্লাহ বিষয়ক ও মানব জাতির কল্যাণ সংশ্লিষ্ট হয় তখন সেটার লাইক কমেন্টস শেয়ার হয় উপরের প্রযুক্তি গুলোর প্রচারিত বিনোদনের ছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ তথ্য শুনা ও আমলে নেয়া মানুষগুলোর মত। আমি বলতে চাই সামাজিক যোগাযোগের এই সাইটগুলোকে নিচক বিনোদন বা ব্যক্তিগত প্রদর্শনীর জায়গা বা সাইটগুলোতে প্রচারিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অগুরুত্বপূর্ণ না ভেবে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা এবং এগুলো দ্বারা কীভাবে সমাজের কল্যাণমূলক কাজ হয় তা চিন্তা করা সেভাবে এগুলো ব্যবহার করা উচিত হবে ।

যারা কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করছেন তারা তো করছেনই যারা করছেন না তাদেররকে উৎসাহিত করেন তবে এগুলোর ইতিবাচক ব্যবহারে সমাজ সুন্দর হয়ে উঠবে। সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগের এই সাইট গুলো ব্যবহার করতে গিয়ে যেন আসক্ত না হয়ে পড়েন অর্থ্যাৎ সাইটে অযথা সময় নষ্ট না করে সেই সময়টাকে ইবাদত ও অন্যান্য ভালো কাজে ব্যবহার করা।

 

  • লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক
  • প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান