বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটের কিছু শংকার কথা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২০

মারজাহান আক্তার: আপনারা স্বীকার করেন আর নাই বা করেন ‘পৃথিবীতে বাঙ্গালী অলস জাতি হিসেবে স্বীকৃত’। উন্নত বা অনেক দেশ প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করলেও অলসতা ও অজ্ঞতার কারনে বাঙ্গালী হিসেবে আমরা ক্ষতিকর দিকটার ভাগীদারই বেশি। কীভাবে একটু বলার চেষ্টা করছি, উন্নয়নশীল ও অধিক জনসংখ্যার বা জনবহুল দেশ হিসাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনার লক্ষ্যে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তা পূরণের পথে থাকলেও এসব উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদনে যে পরিমাণ ইউরিয়া সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে তা খাদ্য চাহিদা মেটালেও আমরা দীর্ঘ অসুস্থতার দিকেও ধাবিত হচ্ছি।

অনেক দেশই প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি ও ওজন স্তর হ্রাস পাচ্ছে। যার ক্ষতিকর প্রভাব বেশি পড়ছে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ সমূহে। এর ফলাফল হিসেবে পৃথিবী বেশি বেশি দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। এতে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে নিন্মাঞ্ছল ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উন্নত দেশগুলো ডিজিটাল যুদ্ধের জন্য হ্যকার বাহিনী তৈরী করেছে বাংলাদেশের পাল্লা দেয়ার মত অবস্থা নেই, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কেউ অপরাধ করছে কেউবা অপরাধের শিকার হচ্ছে স্মপ্রতি রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়ের তথ্য হ্যক হওয়া তারিখ বলতে পারছিনা (আমি দেখেছি এখন সার্চ করে পাচ্ছি না)।

স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলসমূহের কল্পিত ধারাবাহিক নাটক প্রচার, বাহিরগত চ্যানেল বা অপসংস্কৃতি বাংলাদেশের পরিবার ও সমাজের জন্য ক্ষতি বহন করে চলছে। আছে আমার দেশের মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা অবাক করার মতো। আমার জানে পরিশ্রমী দেশগুলো সময় অপচয় হবে বলে মোবাইল খুব একটা ব্যবহার করে না৷ আমার দেশ বাংলাদেশে, ব্যবহারকারী সামর্থ্যবান, সামর্থ্যবান নয় এমন কোন ব্যপার নয় কেন? নিজেই দেখুন বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহাকারীর বর্তমান সংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি ২৯ লাখ ছাড়িয়েছে, ট্রিবিউন ডেস্ক- ১৯/০৬/২০।

আমার জানা মতে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির কিছু বেশি। কি কাজে ব্যবহার করছে জানেন? উত্তর হবে বেশির ভাগ ‘অকাজে’ যা বাঙালিদের দ্বারাই সম্ভব। প্রায় প্রত্যেক পরিবারের নূন্যতম একটি হলেও মোবাইল ফোন রয়েছে তা হতে পারে নরমাল, স্মার্টফোন। আর প্রত্যেক ব্যক্তির আলাদা ও ব্যক্তিবিশেষে একাধিক ও দামী ফোন থাকা স্মার্টত্বের পরিচয় বলে মনে করা হয় বর্তমান সময়ে । এই মোবাইল ভালো কাজে যতটা ব্যবহৃত হচ্ছে খারাপ কাজে তার ব্যবহার কোন অংশে পিছিয়ে নেই। বিরক্তকর কল প্রদান, ফোন দিয়ে বিরক্ত করা, মিথ্যা তথ্য আদান-প্রদান করা, ব্যক্তির অজান্তেই ছবি তোলা, পর্নো ছবি তোলা ও প্রকাশ করা, হয়রানি করা, ব্ল্যাকমেইল করা, পরকীয়া, সন্তান রেখে অন্য পুরুষের সাথে চলে যাওয়া, স্ত্রী-সন্তান রেখে অন্য নারীর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে যেনায় লিপ্ত থাকা, খারাপ/ ক্ষতিকর বিষয়গুলোতে আকৃষ্ট হওয়া (শিশু হতে বৃদ্ধ) ইত্যাদি নানা অপ্রীতীকর ঘটনা ঘটেছে অহরহ। এটা বেশি ঘটছে কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের মধ্যে যারা সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করছে ( ১৮-৩৪, ৮০%, ১৯ ফেব্রুয়ারী/১৯ যুগান্তর)। কেনেনা এই দুই জেনারেশন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে সবচেয়ে বেশি এবং যাদের কাছে খারাপ বিষয়য়টা বেশি ভালো লাগে যারা মানেনা কোন বারন। বেশি আকৃষ্ট শুধু তাই নয় এরা পড়াশোনার চেয়ে ফোন ব্যবহারে আকৃষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। যা প্রকৃত শিক্ষা অর্জনে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আমি মনে করছি। এমন অনেক কিশোর -কিশোরী, ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা ফোন ব্যবহার করে দিনের পর দিন অন্যায় করে চলে যা তার পরিবারও জানেনা। সম্প্রতি মুঠোফোনের বদৌলতে কিশোর দ্বারা কিশোরী হত্যার লোমর্হষক ঘটনা ঘটল (সাবেক ও বর্তমান প্রেমিক মিলে কাকলীকে ধর্ষণের পরে গলা কেটে হত্য করে। পরে তার শরীর থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়, ২৪/০৪/২০), এরকম বা আরো খারাপ ঘটনা দেখে মনে হয় এর ক্ষতিকর প্রভাবই বেশি।

দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৩৪ লাখ ১৮ আগষ্ট/২০, যুগান্তর। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ৯ কোটি ৪৯ লাখ ১৮ আগষ্ট/২০, যুগান্তর। আর যে কাজে বেশি ব্যবহার করছে তা হল সামাজিক যোগাযোগ সাইটে যেমন ফেসবুক ও অডিও-ভিডিও কল ব্যবহাকারী আ্যপ (ইমো,মেসেঞ্জার হোয়াইটস এ্যাপ এর মতো আরও অসংখ্য সাইটে। আপনারা জানেন অনেক গুলো প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করতে ইন্টারনেট প্রয়োজন। তাই প্রত্যেকটা সাইট না ধরে একত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকটা নিয়ে বলছি।

আমার ক্ষুদ্র পর্যবেক্ষন বলছে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষতির দিকটা মোবাইলের চেয়ে ও ভয়ংকর। যা দ্বারা ঘটছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বৃদ্ধি, জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি, প্রতারণা, বিভ্রান্ত ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, ব্ল্যাকমেইল করা, অশ্লীলতা ছড়ানো, অডিও-ভিডিও কলের মাধ্যমে আশ্লীল কথা, কাজ ও যেনা করা, সংসার ভাঙন, মানহানি করা, তথ্য ভাইরাল হওয়া, নগ্ন ছবি ছাড়া, আইডি হ্যাক করে তার তথ্য ও ছবি বিকৃত করা, যৌনাঙ্গের ছবি আদান-প্রদান, পর্নগ্রাফিতে ডুবে থাকা ইত্যাদি অবাধে যৌন অপরাধ করা যাচ্ছে যা বেড়ে চলছে ব্যপকহারে প্রতিনিয়ত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র অবমাননা হচ্ছে ধর্মীয় আইনের। যা সুস্থ রাষ্ট্র/ জাতির জন্য কখনও কাম্য হতে পারে না, আর মুসলমান অধ্যূষিত রাষ্ট্রের জন্য তো নয়ই। কেননা এই সব অপরাধ সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো ব্যবহারের যথাযথ জ্ঞানের অপ্রতুলতা, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং ব্যবহারকারীর অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতি হওয়ায় এর ক্ষতিকর দিকটাই বেশি সাইটেশন করছে। এতে নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে যা সমাজের জন্য ভয়ানক এক দুঃসংবাদ বলে আমি মনে করছি । প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ সাইট গুলোর নেতিবাচক দিকগুলো অনেক সময় ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ পরিপন্থী। প্রযুক্তির উদ্ভব করা হয়েছে মানব জাতির কল্যাণের জন্য। ক্ষতির জন্য নয় ও ধর্মের পরিপন্থী হিসেবেও নয়। প্রযুক্তি এবং সা যো সা গুলোর ইতিবাচক ব্যবহারের মাধ্যমে মানব জাতির জন্য আর্শীবাদ হবে অভিশাপ নয় এমনটিই আমি আশা করি।

প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সকলের কল্যাণের জন্য তা সমভাবে বাস্তবতায়নের মাধ্যমে এর অপব্যবহার বন্ধ করে প্রযুক্তি ও সা যো সার ভালো দিক কাজে লাগিয়ে অবশ্যই কল্যাণ পাওয়া সম্ভব অকল্যাণ নয়। পাশাপাশি প্রযুক্তি ও সা যো সা গুলো আমাদেরকে যেন ব্যবহার না করতে পারে তার ব্যপারে সবাইকে সর্তক থাকতে আহ্বান জানাবো। পাশাপাশি আমি এও বলব বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনের অঙ্গিকার বাস্তবায়নে প্রয়োজন অনুসারে সব ধরণের প্রযুক্তি ও সা যো সা গুলোর ইতিবাচক ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে । বিশ্বে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা হবো আরো মর্যাদাবান।

 

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক