অন্যায় করার স্বাদ পেলে ফেরা কঠিন

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:১৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০

মারজাহান আক্তার:  ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’ প্রবাদটি মিলে যায় অন্যায়ের স্বাদ যে একবার পেয়ে যায় সে সেই অন্যায়ের স্বাদ না নিয়ে কিছুতেই থাকতে না পারে এমন মানুষগুলোর সাথে। কারন এর স্বাদটা শুধু সেই বুঝে যা ওর কাছে হিরা-যহরতের চেয়েও অধিক মূল্যবান এটা আমার কথা নয় সমাজের মানুষের দীর্ঘ সময় ধরে করা পর্যবেক্ষণের ফল… ‘বাঘ একবার রক্ত খাওয়ার স্বাদ পেলে’ বার বার সেই রক্তের স্বাদ পাওয়ার জন্য আড়ালে আবডালে সর্বদাই উৎ পেতে অপেক্ষায় থাকে কখন সুযোগ আসবে যখন সুযোগ আসে হিংস্র হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই স্বাদ গ্রহণ করে নেয়, তখন সে নিজের, পরিবারের রক্তও ভুলে যায় থাকতো অন্য মানুষের রক্তের কথা ভাববে (৭/১২/২০.দৈনিক অনলাইন বিষের বাঁশি তে বাবা কর্তৃক জমজ শিশু কন্যাদের ধর্ষণ উঠে এসেছে) এটাও সমাজ স্বীকৃত সত্য কথা।

সমাজ স্বীকৃত এই কথাগুলো কে তুলনা করা হয় অন্যায়কারীর অন্যায় কাজ করার সাথে। অন্যায় হলো, এমন একটি কাজ যার কোন ধর্মীয়, সামাজিক ও আইনগত স্বীকৃতি নেই। ব্যক্তি নিজের ব্যাক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অন্য ব্যক্তির ক্ষতি বা ক্ষমতা, কতৃর্ত্বের অপব্যবহার করে, করে থাকে । আপনারা একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন সাম্প্রতিক বাংলাদেশে যে সমস্ত অপরাধী ধরা পড়েছে তারা একদিন অপরাধ করে ধরা পড়েনি। দীর্ঘ সময় অপরাধ করার পরও মানুষ যখন তার ভয়ে মুখ খুলতে না পেরে আল্লাহর কাছে শোপর্দ করেছে এবং যখন আল্লাহ তায়ালা আর সহ্য করতে পারেন না ঠিক তখনই তারা ধরা পড়েছে। আর ধরা পড়ার পর আমরা কি দেখতে পাই বলেন তো? দেখতে পাই এরা দীর্ঘ সময় অপরাধ করে চলছে এবং এদের অত্যচারের কাছে সাধারণ মানুষ কতটা জিম্মি হয়ে মানবাধিকার বিহীন জীবন যাপন করত।

আপনাদের আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে, যে যেই ধর্মই পালন করুক না কেন যখন একজন মানুষ খারাপ কাজ করতে যায় তখনও সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা চায় সেই কাজটা যেন সে নিরাপদ ভাবে করতে পারে। মহান আল্লাহ তাকে সবসময় সুযোগ দিলেও যখন তার পাপের বোঝা অধিক ভারী হয়ে যায় তখন আল্লাহর কাছে সুযোগ চাইলেও আর সে পায়না বলে কারো না কারো উছিলায় দুনিয়ার আদালতে ধরা পড়ে যা আপনারা সমসাময়িক অপরাধের ঘটনা থেকে বুঝতে পারছেন।

২০ বছর বয়সী মুন্না মর্গে মৃত তরুণীদের সাথে বিকৃত যৌনাচার বা ধর্ষণ করে তৃপ্তি লাভ করত এমন একটি উদাহরণ দেখতে পাওয়া গেল যুগান্তর-২১/১১/২০ এছাড়া মাদক, যেনা, ধর্ষণ, দুর্নীতি, ঘুষ ইত্যাদি বিষয়ে না একবার আসক্তি হয়ে গেলে সেসব মানুষ গুলোর রুচিবোধও বিকৃত হয়ে যায় ‘বিকৃত রুচির’ মানুষগুলো চাইলে এসব থেকে ফিরে আসতে পারে না। তাই তারা শুধু প্রাথমিক পর্যায়ের অপরাধ করে এমন না তাদের সেই অপরাধ সম্পর্কে কেউ যাতে জানতে না পারে তার জন্য তারা আরো জঘন্য অপরাধ করে তা জানলে সাধারণ মানুষও স্তম্ভিত হয়ে যায় এমন চিত্রই আমরা মিডিয়া গুলোতে দেখতে পাই । অন্যায়কারী অন্যায় করার পথ থেকে ফিরতে না চাইলে তা মরন পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে এমনকি অনেকে চালিয়েও যায়। অবশ্য ‘এমন ধরনের অন্যায় কাজ ব্যক্তি খুবই নিখুঁত ভাবে চালিয়ে যায় ধরা পড়ার সুযোগ কম থাকে আর পড়লেও তা ওভারকাম করার মত ব্যবস্থা থাকে তাদের’। অপরাধ করার জন্য একজন অপরাধী দীর্ঘ পরিকল্পনা করে যাকে ব্যাক্তির মাঝে ধীরে ধীরে তৈরি হওয়া এক ধরনের ‘মানসিক অবস্থা’ বলা যায়। আর এই মানসিক অবস্থা আপরাধী বাস্তবায়ন করে উপযুক্ত সময় ও সুযোগ বুঝে তখন তার নীতি-নৈতিকতা, বিবেকবোধ কিছুই থাকে না অবস্থার প্রেক্ষিতে হিংস্র থেকে হিংস্রতর হয়ে উঠে।

এমন নয় যে এরা জানে না, অন্যায় নিষিদ্ধ কাজ যা করলে শাস্তি পেতে হবে। জেনেও তারা দুটো কারনে অন্যায় চালিয়ে যায় ১.ঐ যে রক্তের স্বাদ পাওয়া ২. এরা জানে অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হবে তবে সেই শাস্তি তারা যেকোনো উপায়ে ওভারকাম করতে পারবে বলে মনে এজন্য তারা অন্যায় কাজগুলো চলমান রাখে।

যখন দেখি অন্যাকারীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত তখন আমার এটা মনে হয় আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় হয়ত কোন ‘গরল’ আছে যা আমাদের মধ্যে বিবেকবোধ তৈরি করতে, মানবতাবোধ, সততা, নৈতিকতা, নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে ব্যাক্তি স্বার্থকে বড় দেখে, সকলকে নিয়ে একত্রে সামনে এগিয়ে চলা, দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয় গুলো শিখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

আমি বলতে চাই যারা অন্যায় করে চলছে বা চলে তারা এই সমাজের মানুষ যখনই অন্যায় করেছে তা সমাজের কারো না কারো সাথে তো করেছে। আর যখন দেখেছে তার অন্যায়ের কোন বা কেউ সাক্ষী নেই তখন থেকেই সে অন্যায়ের স্বাদ গ্রহন করার সুযোগ পেয়ে যায় এবং পর্যায়ক্রমে অন্যায় করতে থাকে। সে সময়ে যদি তাকে বুঝিয়ে দেয়া যেত অন্যায় হয়েছে তবে তার অন্যায়ের স্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ পেতো না।

কি আর বলব বলেন, যদি সাক্ষীদের উপযুক্ত প্রটেকশন এর ব্যবস্থা থাকত বা রাষ্ট্র দিতে পারত তাহলে অনেক ‘অন্যায়কারীর অন্যায়ের স্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেত’ এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমি কি ভুল বলছি আপনারাই বলেন? এছাড়াও অপরাধের স্বাদ পাওয়ার পরও অপরাধী চাইলে কঠিন আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেও অপরাধ করা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে যা খুব কম মানুষই পারে। তবে ফিরে আসা কোন মামুলি বা স্বল্প সময়ের ব্যপার নয়। যাহোক আপনারা অনেক বিজ্ঞজন বলেন তো অন্যায়ের সাক্ষী দেয়ার মত অবস্থা আমাদের দেশে আছে কি? যদি না থাকে তাহলে কেন অন্যায়ের স্বাদ নিবে না বলেন। অন্যায়ের মাধ্যমে যেনা, ধর্ষণ করে হার্ট ভালো রাখা যায়, টাকা, বাড়ি, গাড়ি তথা বিলাসবহুল জীবন যাপন করা যায় তবে কেন অন্যায় নয়? অন্যায় করার স্বাদ মনে হয় অনেক স্বাদ তা না হলে অন্যায়ের শাস্তি আবশ্যম্ভাবী আজ নয়ত কাল তা জেনেও অন্যায় করছে।

অন্যায় চলছে…চলবে… কারন একটাই নয় কি? স্বাদ পেলে ফেরা কঠিন।

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক