বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক অনৈতিক এবং ক্ষনস্থায়ী

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২১

মারজাহান আক্তার: হাজারো উদাহরণ আছে… মানুষের জীবনে এমন কিছু মৌলিক চাওয়া রয়েছে যা বেঁচে থাকলে তার জন্য শুধু আবশ্যকই নয় ফরজ বললেও ভুল হবে না। আর এসব চাওয়ার একটি হলো জৈবিক চাহিদা যেটা প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নর-নারীর মৌলিক, সহজাত ও স্বাভাবিক চাহিদা। সহজাত ও স্বাভাবিক চাওয়া বলে ধর্ম বিবাহের মাধ্যমে এই জৈবিক চাওয়ার পূরণের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। বিবাহ বহির্ভূতভাবে অন্য যেকোন উপায়ে এই জৈবিক চাওয়া পূরণ করা থেকে মানব জাতিকে বিরত থাকতে ধর্মের যেমন নির্দেশ রয়েছে তেমনি কেউ যদি সেই নির্দেশ অমান্য করে তার উপর কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করতে কোন সহানুভূতি না দেখানো হয় তারও নির্দেশনা রয়েছে।

বিবাহ জৈবিক চাহিদা পূরণের একটি দীর্ঘ স্থায়ী বন্ধনই নয় বান্দার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে বিশেষ নেয়ামত স্বরূপ যা প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নর-নারীর মৌলিক ও সহজাত চাহিদা পূরন করে মানবজাতির সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজকে স্থিতিশীল রাখে। বিবাহ ছাড়া জৈবিক চাহিদা পূরণের যে বা যারা যেভাবেই সম্পর্ক স্থাপন করে তা বেশির ভাগই একটা স্বল্প সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয় যাকে একধরনের ‘মোহ’ বলা যায়(পর্যবেক্ষন করলে বুঝা যায়)। অর্থ্যাৎ বলতে চাচ্ছি ‘ এই মোহ কেটে বা ভোগ পূরন হয়ে গেলে সেই সম্পর্ক ঠুনকো কাচের ন্যায় ভেঙ্গে যায়। আর যখন ভেঙে যায় তখন ভোগদাতার কাছে ভোগকারী উৎচিষ্ট হয়ে যায়(কতটা ব্রেইন ওয়াশ করে, সম্মোহিত করে অন্যায় কাজ করতে রাজি করানো হয় সেটা একেবারে ভুলে গিয়ে ভোগকারীর কাঁধে সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে দুনিয়ার আদালতে বিজয়ী বেশে জীবন যাপন করে থাকে), নোংরাকারী মনে হয়, চূড়ে ফেলে দেয়, সম্পর্ক ছিন্ন করে’। এতে করে কেউ দিশেহারা হয়, কেউ কষ্ট নিয়ে জীবন্ত মৃত হয়ে বেঁচে থাকে, কেউবা আত্মহত্যা করে দুনিয়া হতে বিদায় নেয়, কেউ মহানন্দ নিয়ে বেঁচে থাকে (যার কাছে অন্যায় করাই ন্যয়) অনেক বাস্তব ঘটনার আলোকে বলা।

ব্যক্তি কখনও তার এই সহজাত, মৌলিক প্রয়োজন অবৈধভাবে মেটাতে বা তার অতিরিক্ত ভোগের চাহিদা অবৈধভাবে মেটানোর জন্য অনেকের সাথে জৈবিক চাওয়া পূরণের জন্য স্বল্প স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলাে। স্বল্প সময়ের এই ধরনের সম্পর্কের কারণে তার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকের জীবন তখন নষ্ট হয়ে যায়। যারা নিজের প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় ভোগের জন্য অন্যের জীবন শেষ করে দেয়, আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে (সমাজে নোংরা কাজ করে বেড়ায়) আপনারাই বলেন তাদের কি সমাজে বেঁচে থাকার কোন অধিকার থাকতে পারে? সমাজে এদের মত পাপীদের থাকার জায়গা না হওয়া উচিত নয় কি? এদের কুপ্রভাব ও নোংরামির জন্যই ভালো মানুষ গুলো সমাজে খুব বেশি মূল্যায়িত হয় না।

ইসলামে বিবাহ বর্হিভূত এই ধরনের সম্পর্ককে জিনা, ব্যভিচার বলা হয়। নবী (সা.) যিনাকারীর শাস্তি বর্ণনা দেন যে, ‘একজন অবিবাহিত পুরুষ এবং একজন অবিবাহিত নারীর ব্যভিচারের ক্ষেত্রে, তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন পেতে হবে। আর যদি বিবাহিত পুরুষ বিবাহিত নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করে তাহলে তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে।’ (সহীহ মুসলিম)

বিবাহ ছাড়া এই ধরনের সম্পর্ক অনেক সময় ইচ্ছেতে হয় আবার অনেক সময় বাধ্যও করা হয়। বাধ্য করা হলে ভিক্টিম নোংরা ও বিকৃত রুচির মানুষ গুলোর নোংরামির কথা সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছে প্রাণ খুলে বলতে না পারায় ও সমাজে এদের ন্যায্য বিচার না হওয়ায় এখনও মিডিয়াতে ধর্ষণের ও যেনার ঘটনা প্রতিদিনই উঠে আসছে যা স্বল্প সময়ের ভোগের জন্যই হচ্ছে।

বিবাহ বহির্ভূত স্বল্প সময়ের মোহের বা ভোগের এই সম্পর্ক অনেক সময় ব্যক্তিকে ছোট অন্যায়কারী হতে বড় অন্যায়কারীতে পরিণত করে যা একটি জাতীর জন্য কখনও কল্যাণকর সংবাদ হতে পারে না।এছাড়া উচ্চ শিক্ষিতরা যখন এ ধরণের অন্যায় কাজগুলো করে না তখন এদেরকে শিক্ষিত বলা তো দূরে থাক অশিক্ষিত বলতেও আমি ঘেন্নাবোধ করি কেননা এদের ‘নৈতিকতাহীন পশু হওয়ার উচ্চ শিক্ষা’ আমার কাছে একেবারেই মূল্যহীন। এর চেয়ে অনেক বেশি শ্রদ্ধা যোগ্য অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিতদের নৈতিক আচরণ বা তাদের বিবেকবোধ।

ডিসি আহমেদ কবির (২৭-০৯-১৯. নয়া দিগন্ত) এর কথা আপনারা জানেন। সাথে আমার আইডিতে দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কুকৃর্তী আপলোড আছে। নেই বা জানেন না তার মত হাজার হাজার শিক্ষিত ও উচ্চ ডিগ্রি ধারিদের কথা যারা প্রতিমূর্হত নিরবে নারীদের ভোগ করে। আর ভোগ শেষে শুধু ছুড়ে ফেলে দেয় তা ই নয় নিজের অন্যায় ঢাকতে ও দুনিয়ায় আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে অনেককে খুনও করে তার করা অন্যায়ের প্রমাণ লোপাট করে (আনুশকা নূর আমিনের ধর্ষণ ও হত্যা নয়াদিগন্ত.০৮-০১-২১. ও সেফটি ট্যাংকি হতে প্রেমিকা মুরশিদা আক্তারের লাশ উদ্ধার যুগান্তর.১০-০১-২১)।

স্বেচ্ছায় যেনা করা অনেক দেশের আইনেও স্বীকৃত। মুসলমানদের জন্য তা স্বীকৃত না হলেও এরা এ কাজের জন্য কোনভাবেই শাস্তির আওতায় আসে না বলে অনেকেই তা জল খাওয়ার মত করে চলছে, অনেকে আবার আমৃত্যুও চালিয়ে যাচ্ছে।

আপনারা একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন আইন সংশোধিত হওয়ার পরও স্বল্প ভোগ পূরণের চিত্রগুলো দেখলে বুঝা যায় এদের আইন অমান্য করার দুঃসাহস কতটা! এদের নোংরা দৃষ্টির কারনে নারী ঘরে বাহিরে কোথাও কি নিরাপদ আপনারাই বলেন? এদের নোংরা আচরণে মনে হয় ‘নারী তোমার জন্মই পুরুষের ধর্ষণের ও যেনার শিকার হওয়ার জন্য’। যে সব পুরুষরা এসব করে ও মনে করে স্ত্রী ছাড়া যেকোন নারী (মেয়ে শিশু বা প্রাপ্ত বয়স্ক নারী) যখন তখন যেভাবে মন চাইবে ঠিক সেই ভাবে ভোগ করবে, ভোগ পুরালে চূড়ে ফেলে দেয়, আল্লাহর নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় তাদের জন্য সংশোধিত আইন বাস্তবায়নে বিন্দু মাত্র ত্রুটি না করা।

প্রয়োজনে আইনকে আরো সংশোধন করা, কেউ ‘অপরাধের শিকার হয়ে গেলে তাকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার পরিপূর্ণ সাপোর্ট দেয়া’ ভিক্টিম নির্দোষ হলে অপরাধীর শাস্তি হবে ঠিক আছে , শুধু এটা নয় সাথে প্রতারনার (মিথ্যা বলা, প্রতিশ্রুতি দিয়ে না রাখা ইত্যাদি) আশ্রয় নিয়ে, সম্মোহন করে অপরাধ করতে উৎসাহিত করে(আনুশকা নুর আমিন, মুরশিদা আক্তার), অপরাধ করতে বাধ্য করা হলে তাও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।যেই এ ধরনের কাজ করবে তার জন্য কঠোর আইন হওয়া ও বাস্তবায়ন করা, এই কাজে ব্যবহৃত অঙ্গগুলোর কার্যক্ষমতা শেষ করে দেয়া, ধর্মের শাস্তি কার্যকর করা, সামাজিকভাবে এদের একঘরে করে দেয়া….

আমার মনে হয় ইত্যাদি বিষয় গুলো কার্যকর করা না করলে ‘বিবাহ বহির্ভূত ভোগ পূরনের জন্য স্বল্প স্থায়ী’ এই সম্পর্ক কখনও বন্ধ করা যাবে না, আল্লাহর হুকুমও মানা হবে না, সমাজেরও কল্যাণ হবে না।

 

লেখক:

ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক