বঙ্গবন্ধুর সহচর মাহফুজুল বারীর মৃত্যু দিবস কাটলো নিভৃতেই

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:০৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২১

দেশালোক: দেশের দক্ষিনাঞ্চল লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির কৃতি সন্তান মরহুম মাহফুজুল বারী’র ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ২৩ জানুয়ারী। একেবারে নিভৃতেই দিনটি অতিবাহিত হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ ঘনিষ্ট সহচরের। তিনি ১৯৩৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে জন্ম গ্রহণ করেন।

মরহুম বারী’র ছিল বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযাত্রী। আগরতলা মামলার ২২নং আসামী।

মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু তাঁকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নিয়ে আসেন। ৭৫ এর নভেম্বরে তিনি দেশ ত্যাগ করে প্রথমে ভারত তারপর যুক্তরাষ্ট্র হয়ে কানাডায় অভিবাসী হন।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য ছিলেন মাহফুজুল বারী। আওয়ামী

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য ছিলেন মাহফুজুল বারী। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগেরও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিনি।

মাহফুজুল বারীর মৃত্যুতে সে সময় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় তিনি ’৭৫ পরবর্তী সময়ে মাহফুজুল বারীর অবদানের কথা স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা প্রয়াত মাহফুজুল বারীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মাহফুজুল বারী পাকিস্তান বিমানবাহিনী সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু’র সঙ্গে মুক্তি পান।

পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মরত ও প্রাক্তন সদস্য এবং সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, আসামিরা ভারত সরকারের সহায়তায় সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা শহরে বসে তারা এই পরিকল্পনা করেন।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। তার তিন বছর পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন মাহফুজুল বারী।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন মাহফুজুল বারী। কলকাতা হয়ে পরে কানাডায় গিয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন তিনি।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নিয়ে ২০১৫ সালে তার লেখা বই ‘অভিযুক্তের বয়ানে আগরতলা মামলা’ প্রকাশ করে সময় প্রকাশন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,  মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তিনি বাংলাদেশে আসেন। দেশে এসে তিনি নোয়াখালীর মাইজদিতে বেড়াতে যান। সেখানে শরীর খারাপ হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। গত রবিবার তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হয়। পরে সোমবার ভোর ৬টার দিকে তিনি মারা যান। তবে বাংলাদেশে তাকে নূন্যতম স্বীকৃতি না দেওয়ায় লাশ কানাডায় ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মরহুম মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের ২৩ উদীচী কানাডা সংসদের উপদেষ্টা মাহফুজুল বারী  রাজধানীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে রেখে যান। তারা সবাই টরেন্টোতে বসবাস করেন।