অসুস্থদের আর্থিক সহায়তায়  দ্বিমত পোষণ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:২৮ অপরাহ্ণ, মে ২৩, ২০২১

স্বার্থান্বেষী পথচারী (ছদ্মনাম): ২০১৮ সালের জুন জুলাই হবে হয়ত – আমাদের ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান স্যারের কাছে একটা আর্জি নিয়ে গেলাম এই মর্মে যে একজন (আমাদের আল্লামা ইকবাল হলের বাবুর্চি) অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত এবং তার চিকিৎসার জন্য বিশাল বড় একটা অংক লাগবে। এ কথা আর বিস্তারিত বলার প্রয়োজন মনে করছি না যেহেতু আপনারা এতদবিষয়ক ভাল জ্ঞান রাখেন কেমন টাকা পয়সা খরচ হয় একটা ক্যামো দিতে বা অন্যান্য খরচাপাতি। স্যারের কাছে গিয়েছিলাম তখন আমি ডিপার্টমেন্টের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি- স্যার পকেট থেকে টাকা বের করতে করতে বলল, ‘ সায়েম, এসব করে আসলে লাভ নেই – তোমরা ভিন্ন কিছু প্লান কর। যাতে বাস্তবিক অর্থে দশজনের উপকার হবে”৷

২. আমার দেখা সবচেয়ে সেরা মাল্টিডাইমেনশনাল সোশ্যাল একটিভিস্ট চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৩ এর বিভাগীয় কর কমিশনার দাউদ প্রকাশ বাদল সৈয়দ স্যার – তিনি সবমিলে সমাজ পরিবির্তনের জন্য মোটাদাগে ভাল একটা কাজ করেন। তার পরোক্ষ নির্দেশনায় অনেস্ট, পে ইট ফরোয়ার্ড, প্যারেন্ট লাউন্জ, মার্চ ফরোয়ার্ড এর মতো বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে যেগুলোর মাসিক সহযোগিতা কোটিরও উপরে (তাদের মাসিক প্রতিবেদনের খবর এটি)।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল তিনি বা তার এসকল সংগঠনগুলো কোন অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তোলার জন্য মোটাদাগে সহযোগিতা করেন না -তারা যে পারেন না এমন না বরং তারা এসব করেন না। তার বিখ্যাত বানী- ‘আসুন মায়া ছড়াই’

৩. একটা হৃদয়বিদারক ঘটনা পড়েছিলাম গত সপ্তাহে একটা ফেসবুক । সেখানে একটা পরিবারের কথা বলা হয়েছিল যে পরিবারের বাবা প্রথমে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে সব হারিয়ে চিকিৎসা করায় – কিন্তু তাকে বাঁচানো যায় নি। তার কদিন পর তার ছোট একটা মেয়েও ক্যান্সার আক্রান্ত হয় – বিভিন্ন জন থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে প্রথমবার চিকিৎসা করানোর পর সে সুস্থ হয়ে উঠেন। কিন্তু তার মাস খানেক পর সে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের যা সহায় সম্বল ছিল তা তো গেলই সাথে মানুষের সহযোগিতাও গেল কিন্তু কার্যকর কোন সমাধান আসেনি আদতে।

৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে থাকা অবস্থায় একটা মেয়ের জন্য বেশ ঘটা করেই সবাই টাকা পয়সা তুলে তাকে ভারতে পাঠায় চিকিৎসা করানোর জন্য। মাত্র পাঁচ বছরের রাওদা নামের মেয়েটিকে কেউ চিনে না এমন নাই আমার বিশ্বিবদ্যালয়ে৷ সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফল নিয়ে সে ভারত থেকে ফিরলেও গত বছর সে সবাইকে ছেড়ে দুনিয়া থেকে চলে যায় এই চলতি বছরের ঘটনা বলি – আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন এলামনাস আপু তিনি বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই আবার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। বিয়েও হয়নি আপুটির ক্যান্সার ধরা পরে – ডাক ঢোল পিটিয়ে তার জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা করে। ফলাফল আমাদের দুঃখিত করে চলতি বছরেই সে ভারতের একটি হাসপাতালে মারা যান ।

৫. উপর্যুক্ত সবগুলো পয়েন্ট সত্য ও বাস্তব। স্যারের সেদিনের কথায় আমি বা আমার সঙ্গীরা কিঞ্চিৎ মন খারাপ করলেও পরবর্তীতে আমি বিষয়টা নিয়ে বিশদভাবে ভাবার পর অনুভব করলাম যে আসলেই – কাউকে চিকিৎসার জন্য এভাবে ফান্ড কালেকশান করাটা বাস্তবে কোন কাজে আসে না বরং এটা ঐ পরিবারের মানুষকে সামাজিকভাবে এক প্রকার ছোট করা হয়।

এবার রমজানের সময় আমি একটা বিষয় নিয়ে ফেসবুকে বহুবার লিখেও আবার কেটে দিয়েছি – ‘ আপনারা এ বছরটাতে অন্তত মসজিদ মাদ্রাসায় ভবন বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমের জন্য দান না করে আপনার পাশে থাকা অসহায় মানুষটাকে নীরবে কটা টাকা হাতে গুজে দিন “। একটা গল্প হয়ত আপনি পড়েছেন – এক বৃদ্ধা হজ্ব ভ্রত পালনের জন্য টাকা জমা করেছিল পরবর্তীতে সে টাকা দিয়ে সে হজ্বে যেতে না পেরে গরীব মানুষের প্রয়োজনে ব্যয় করে দেন। আল্লাহর রাসুল (সঃ) তার জন্য দোয়া করেন তার এমন মহত উদ্যোগের জন্য ( গল্পটি আমি সরাসরি কোট করতে পারিনি) । আমার পোস্টের বকালাপ বা বৃদ্ধার কাহিনি এখানে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে তবে এটা মানতে হবে যে সময় বলে দিবে আসলে আমাদের কোনটা করা উচিত আর কোনটা অনুচিত – ইসলামের প্রাক্কালে এমন বহু ঘটনা রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে কোন কাজটি কখন করা উচিত তার ঠিক দিকনির্দেশনা দেয় — হাশরের ময়দানে আপনাকে বোধহয় জিজ্ঞেস করা হবে:

আপনার সামনে অমুকে অভুক্ত ছিল, আপনি কি তার খবর নিয়েছেন?

– অমুকে টেনশনে ছিল, আপনি কি তার সাথে সুন্দর করে একটু কথা বলেছেন?

– অমুকে হাটতে পারত না, আপনি কি তাকে হাটতে সহযোগিতা করেছিলেন? মসজিদ বানানোর যে সওয়াব আপনি পাবেন তারও নিশ্চয়তা কিন্তু নাই- কারণ আমাদের বেশিরভাগ কাজেই আমরা রিয়ার আশ্রয় নেই যা আমাদের দানকে শুধুমাত্র টাকার অপচয়ে পরিণত করে।

কাজেই আমাদের সকল নগন্য কাজগুলোকে আরও গুরুত্ব দিলে আমরা যেমন রিয়া থেকে বেচে থাকতে পারব তেমনি আমাদের বেশি অর্থ খরচ হবে না বা নিজেদের উপর আর্থিক চাপও পড়বে কম৷

লেখক: স্বার্থান্বেষী পথচারী, ইমেইল: sarthanweshi@gmail.com