নারীরা একটু বেশি সময় বেঁচে থাকে !

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৯:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২০

মারজাহান আক্তার: মনে দাগ কাটে যখনই শুনি পুরুষরা ‘মহিলাদের কই মাছের প্রাণ’ কথাটি বলে কটাক্ষ করে। পুঁটি মাছের প্রাণ ও কই মাছের প্রাণ এর সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। প্রথমটার অর্থ খুবই অল্প হায়াত আর দ্বিতীয় টার অর্থ দীর্ঘ হায়াত। মহিলাদের হায়াত একটু বেশি তার কারন হিসেবে কাজ করছে জিনগত বিষয়, ভ্রূণ (XX, XY) x ক্রোমজমে অনেক জিন থাকে যা মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করে, হরমোন (পুরুষের মধ্যে টোস্টাস্টরেন হরমোন থাকে যা তাকে ঝুঁকি পূর্ণ কাজে উৎসাহিত করে এতে পুরুষরা খুব সহজে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যূর মুখে পতিত হয়, অভ্যাস-আচরণ( পুরুষের আর মহিলার চাল-চলন একই রকম নয় এটাতো আপনারাই বুঝেন)।

যা হোক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলছি নারীরা একটু বেশি হায়াতের মালিক হয় কিন্তু সেটা মোটেও দীর্ঘ নয়। তার প্রমাণ দিচ্ছি বিডিনিউজ ২০/০৬/৩০ এ যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭১.৫ তার মধ্যে পুরুষ ৭১বছর নারী ৭৪বছর। পরিসংখ্যান আরও বলছে বিয়ের গড় বয়স নারী ১৮ পুরুষ ২৫। ৮৫% পরিবার পুরুষ প্রধান। বিধবা, তালাক প্রাপ্ত, স্বামী হতে বিছিন্ন ১১% মহিলা।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থার দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় বেশির ভাগ বিয়েতে নারী ও পুরুষের বয়সের ব্যবধান ১০ বছরের অধিক থাকে। ৬/৩/১৮ সালের বাল্যবিবাহের পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিবাহিত ৫০ শতাংশ নারী যাদের বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বিবাহ হয়ে গেছে। এদের কে বা কারা বিয়ে করছে আপনারাই বলেন? অধিক বয়সী ছেলেদের কাছে কম বয়সী মেয়েের বিয়ে দেয়া নিয়ে আমাদের সমাজ মাথা ঘামায় না এর কারন হিসেবে আমার যেটা মনে হয় তাহলো মুরুব্বি ও সমাজের কাছে ‘এটি একটি স্বভাবিক বিষয়’ তাই। কিন্তু বিষয়টা ভবিষ্যতের জন্য মোটেও স্বাভাবিক নয়। কারন হিসেবে আমি বলব বর্তমান শিক্ষায় পুরুষের চেয়ে নারী এগিয়ে (নারী শিক্ষার হার ৮৮.৭% – এডুকেশন নিউজ ১৪ফেব্রুয়ারী/২০)। ভবিষ্যতে এ হার অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যদি তাই হয় পড়াশোনা শেষ করতে মেয়েদের প্রায়ই ২৪/২৫ বছর সময় লেগে যাবে তাহলে এদের বিয়ে করবে কারা? আপনারাই বলেন। নাকি বরের কচি লাউয়ের স্বাদ পাওয়ার জন্য মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দিবেন? অবশ্যই সেই সিদ্ধান্ত আপনাদের। আমি শুধু বলতে চাইছি যে এরা তো আপনার আমার এই সমাজেরই সন্তান এদের ভাবনার দায়িত্ব কি আপনার আমার সমাজের একদমই নেই?

বলছিলাম বয়সের এতটা ব্যবধানে পুরুষ বিয়ে করে বলে বেশির ভাগ সময়ই নারীকে অল্প বয়সে বিধবা হতে হয় ও অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হয়ে স্বামী বিহীন ১১% নারীকে বেঁচে থাকতে দেখা যাচ্ছে। একদিকে নারীর হায়াত একটু বাড়তি অন্যদিকে পুরুষ সঙ্গীর হায়াতের সমপরিমাণ হায়াতও যদি সে পায় তাহলে সেটাকে কই মাছের প্রাণ এর মতো মনে হয় আমাদের সমাজের পুরুষদের কাছে যা মোটেও ঠিক নয়। পুরুষ কেন তার চেয়ে অনেক কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করছে? উত্তর হলো কচি লাউ খেতে খুব মজা চামড়া সহ খাওয়া যায়। এই উত্তর আমার নয় যারা এমন বিয়ে করছে তাদের। আপসোস ও ঘৃণা তো তখনই লাগে যখন দেখি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা এমন কাজ করছে বা করে। শিক্ষাকে তখন প্রশ্ন করি তোর থেকে এরা একি শিখল?

আমি বলছি যে কারনে মহিলাদের কই মাছের প্রাণ কথাটি বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে সেই সুযোগ বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ১১% মহিলা যাতে সমাজে অন্যদের মতো সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করে দিতে যে যার জায়গা হতে সম্মেলিত ভাবে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। কটাক্ষ করতে নয় বুঝতে পারছেন তো? এছাড়া গবেষণা বলছে একটা সময় গড় আয়ুর কোন ব্যবধান থাকতেবে না তবে ২০৩০ সাল নাগাদ এই ব্যবধান কমে হবে ১ বছর নয় মাস। সে সাথে এটাও জানিয়ে দিচ্ছে নারীরা বেশি হায়াত ফেলেও অসুস্থ থাকে অনেক বেশি।অবশ্য, বাঙ্গালী নারীদের ক্ষেত্রে আমি মনে করি নিয়মিত পিরিয়ড, সংসার-স্বামী-সন্তানদের দেখভাল করতে গিয়ে মানসিক চাপ ও নিজের খাওয়ার দিকে নজর না(সবাইকে খাওয়াতে গিয়ে নিজে বঞ্চিত হয়) দেয়া অন্যতম প্রধান কারন।

লেখক: ক্ষুদে সমাজ বিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক