একজন ননএমপিও অনার্স শিক্ষকের আর্তনাদ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:০৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২০

কালাচাঁদ মিত্র: আমার এই বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকের দুঃখের জীবনের কথা কারে শোনাব! একমাত্র মেয়ের বয়স আজ তিন বছর আট দিন। সে এমন কোনো কথা নেই যা বলতে পারে না। মনে হয়, বড় মানুষের মতই সব বোঝে। অসহায় বাবার বুকটা ভেঙে যায়। ৬-৭ মাস ধরে তাকে একফোঁটা দুধ কিনে দিতে পারি না। মাথার উপর অনেক বড় ঋণের বোঝা এখন।

আজকের সবচেয়ে বড় কষ্টের কথা, ভাবলে দু’চোখে পানি নেমে আসে-পাশের ঘরের বাচ্চারা দুধ খেয়ে খালি গ্লাসটা উঠানে ফেলে রেখে গেছে। তিনবছর আটদিন বয়সের একমাত্র মেয়েটি আমার সেই গ্লাসটি কুঁড়িয়ে মুখ লাগিয়ে কিছু না পেয়ে জিভ বের করে চাটছে। এটা দেখে তার মা অনেক মেরেছে তাকে। আমাকেও যা মন চায়…….. এমন দৃশ্য দেখার আগে বাবার মরণ হয় না কেন? এমন শিক্ষকের জীবন থাকার মানে কি!!!

মেয়ের গায়ের সব জামা-কাপড়ই এখন ছোট ও ছেঁড়া। একটিও তার গায়ে লাগে না। মেয়েটি ছেঁড়া জামা পরবে না। ভালো জামা চায় আর ছেঁড়া ও ছোট জামা-প্যান্ট ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এখন আবার শীত পড়েছে। পুরাতন শীতের পোশাকের একটিও তার গায়ে লাগে না। তারপরেও জোর করে টেনে লম্বা করে ওর মা ওকে পরিয়ে দেয়। ওসব পরানোর সময় চিৎকার করে কাঁদে! আমিও এবং ওর মা ওরই ছেঁড়া পোশাকে চোখ মুছি। আবার কত কী খেতে চায়! চকলেট খাবো, প্যাকেট খাবো, বিক্কুট খাবো….. সব শুনি আর বলি, বাজার বন্ধ বাবা। বাজার খুললে সব এনে দেবো। আসলে কিছুই আনতে পারি না। ক্ষমতা নেই। অবশেষে ও ঘুমিয়ে পড়লেই তবে ঘরে ফিরি।

কবে করোনা যাবে, কবে স্কুল-কলেজ খুলবে! কবে সরকার এমপিও দেবে! তবে করোনাকালীন সাহায্য হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ৯ কেজি চাউল পেয়েছিলাম। আর কিছু না। মাঝে মাঝে মনে হয়, পরিবারের সবাইকে মেরে নিজেও মরে যাই। রাতের অন্ধকারে একা একা রাত জেগে কাঁদি আর ভাবি, আমি যে আজ ভিক্ষুকের চেয়েও বড় ভিক্ষুক। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বামী, নিকৃষ্ট বাবা, নিকৃষ্ট সন্তান।

লেখক

একজন ভূক্তভোগী ননএমপিও অনার্স শিক্ষক