শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাতে দু দিন ছুটি ও ব্যক্তি বিশেষের অজানা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:৫৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২২

– সারোয়ার মিরন

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নাম্বার ওয়ান বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের (প্রগতি- বাজার শাখা) হিসাব বিভাগে কাজ করেছি ৬বছর (২০১৩-২০১৯)। ২০১৬ সালে ব্র্যাক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাপ্তাহে শুক্র-শনি বন্ধ রেখে কর্ম দিবস ৫দিন করার। ১ লক্ষ ১৫হাজার (প্রায়) বেশির ভাগ (বিশেষ করে মাইক্রোফিন্যান্স) কর্মীদের ধারনা ছিলো প্রতিষ্ঠান এমন সিদ্ধান্তে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে! কিন্তু বছর শেষে দেখা গেল সে বছরেই সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে। এছাড়াও প্রায় সকল সূচকে দেখার মতো উন্নতি করেছিলো। সেই থেকেই সাপ্তাহে ৫কর্ম দিবস এখনো চলছে (অবশ্য রাজধানী মহাখালীস্থ প্রধান কার্যালয় পুর্ব থেকেই দু দিন বন্ধ কার্যকর ছিলো)।

তারপর থেকে আরো বেশ কয়েকটি এনজিও সাপ্তাহে দু দিন বন্ধ বন্ধ চালু করেছে। কাউকেই ক্ষতিগ্রস্থ হতে শুনিনি। বাংলাদেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় তথা সরকারি চাকুরেরা সাপ্তাহে দু দিন বন্ধ পাচ্ছেন। এতেও দেশের মারাত্মক কোন প্রভাব পড়েনি। বৈশ্বিক সমস্যা বাদ দিলে মোটামুটি সব সুচকেই এগিয়েছে দেশ। সরকারি বলেন আর বেসরকারি বলেন দু দিন বন্ধের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবারকে সময় দেয়া প্লাস কিছু অফিস ব্যয় কমানো। অন্যদিকে বন্ধের এ দু দিন যেন পরিবার সমেত কাটাতে পারে সে লক্ষ্যে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই স্থায়ী ঠিকানার কাছাকাছি কর্মীদের পদায়ন করছে। এখানেও প্রতিষ্ঠান গুলো সফল হচ্ছে।

এবার আসি বেসরকারি শিক্ষক ও সরকারি চাকুরেগণের (সরকারি শিক্ষকসহ) ব্যবচ্ছেদে। সরকারী চাকুরেরা বেসিকের ৪০/৪৫ শতাংশ বাসাভাড়া পায়। পক্ষান্তরে বে.শি রা এ বাবদ পায় ১হাজার টাকার থোক বরাদ্ধ। ৫০০টাকার চিকিৎসা ভাতা। একজন শিক্ষক কর্মজীবন শুরু করেন মাত্র ১২৫০০ টাকায়। চাকুরী শেষেও নগন্য সুবিধা পান। এনটিআরসিএ’র কল্যানে এখন একজন বে.শি নিজ জেলার বাহিরে শিক্ষকতা করছেন। বে.শি দের বেতনের জন্য সভাপতি প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরের জন্য পরের মাসের ১০/১৫ তারিখ অপেক্ষা করতে হয়। এগুলো আবার নিউজও হয়।

গতো কয়েকদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুকে বে.শি দের বাৎসরিক মোট ছুটি সংক্রান্ত একটি গুজব অন্য পেশার মানুষরা ছড়াচ্ছে। তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, বেশির ভাগ জাতীয় ছুটি গুলো বে.শি দের কর্মস্থলে কাটাতে হয়। অন্যদিকে রমজান, ইদ, পুঁজা, মৌসুমী ছুটি গুলোও হয়তো সরকার পুনঃ সমন্বয় করবেন। (এখানে বে.শি ও সরকারী চাকুরেদের বেতন ভাতার আকাশ পাতাল তারতম্যের বিষয়টিও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে।)। পাবলিক পরীক্ষা কিংবা অভ্যন্তরিন পরীক্ষার সময় বে.শি রা কখনোই ছুটি কাটায় না। পরীক্ষার ডিউটি পালন ও সহায়ক কাজ গুলো করতে হয়। অন্যদিকে পরীক্ষার হল থাকে শুধুমাত্র উপজেলা পর্যায়ের এক বা দুটি প্রতিষ্ঠানে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠান গুলোতে শ্রেনি কার্যক্রম চলমান থাকে। এক্ষেত্রে সরকার কিংবা ব্যক্তি হিসেবে আপনী যদি চান ছুটি বিষয়টি সরকারীদের মতো হোক, সেটা- আমিও চাই, সেক্ষেত্রে দু পক্ষের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদিও এক সমান হোক এটাও আমরা আশা করতে পারি।

আপনি যদি শুধু ছুটির ধুয়ো ছড়ান বা বলেন এবং বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধাদির কথা কৌশলে এড়িয়ে যান তাহলে আপনাকে অবিবেচক না বলে উপায় নেই। প্রসঙ্গতঃ অধিকাংশ মানুষই মনে করেন বেতন-ভাতা কিংবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার আশায় নন, একজন শিক্ষক সন্মানের জন্যই এ পেশায় আসেন। এ পেশা আদর্শ পেশা। বেতন মুখ্য নয়। দেশে যথাযথ বেতন ভাতা না পেয়ে ইমাম-মুয়াজ্জিনরাও তো সাদা সপেদ জামা পরছে। সুখে জীবন জীবীকা কাটাচ্ছে। হ্যাঁ! নিশ্চিত হয়েই বলছি এটা ভ্রান্ত ধারনা আমার আপনার। আর সম্মান! সেটাও এখন জাদুঘরে! চারপাশে তাকালেই এর বাস্তবতা দেখবেন।

পৃথিবীর অন্য সকল পেশায় নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি অবসরে অন্য যে কোন বৈধ পেশায় যুক্ত হতে পারেন। এ দেশে শিক্ষকরা হয় সম্মান হারানোর শংকায় নয়তো সরকারি নীতির বলে অন্য পেশায় যুক্ত হতে পারছেন না। কেউ কেউ আবার প্রাইভেট টিউশনির কথা বলবেন! তাঁদেরকে বলছি, একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৫জনের মতো শিক্ষক কর্মচারী থাকেন। তাঁদের মধ্যে কেবল দু একজন (গণিত ও ইংরেজি) শিক্ষক এটার সুবিধা পান! বাকিরা দৈন্যদশায়! এ বন্ধ কেবল দেশের বহুবিধ সম্পদের ব্যয়ই হ্রাস করবেনা, প্রকারান্তে  শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তাঁদের পরিবার পরিজনের সাথে একান্তে দুটি দিন ঠিকই কাটাতে পারবে। স্মাতর্ব্য যে, পরিবারই শিশুর প্রথম শিক্ষালয়। মা -বাবাই তাঁর প্রকৃত শিক্ষক। অভিভাবক তথা শিক্ষা বিষয়ক বহুমূখী বলয়ের কবলে পড়ে শিশুরা আজ পরিবার সান্নিধ্য বঞ্চিত হচ্ছে! ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পড়া আর পড়া।এ প্রসঙ্গে একটি কৌতুকও বেশ চলমান। “বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাবাকে চিনতে এক স্কুল পড়ুয়া শিশু তার মাকে জিজ্ঞেস করছে -মা, প্রতিদিন ভোর বেলায় যে লোকটি আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তিনি কে? মায়ের জবাব, সে তোমার বাবা।” ২০২৩ সালে শুরু হতে যাওয়া শিক্ষাক্রমের মূলনীতি বাস্তবতা ও জীবন জীবীকা নির্ভর পাঠ্যক্রম। সুতরাং একটা শিশু/শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি তাঁর শৈশব কৈশোর, পরিবারের সান্নিধ্য, শারিরীক ও মানসিক পরিশ্রমও জরুরী।

শুধু ছুটির বিষয়টি নয়, সব সুযোগ সুবিধার কথা বলুন। বেসরকারি শিক্ষকরাও মানুষ, তাঁদের পরিবার পরিজন আছে। জীবন বাহনের জন্য খাবারেরও প্রয়োজন আছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য ও যাবতীয় ব্যয়ের দ্বিগুন বৃদ্ধির এ কালে একজন শিক্ষক এ সামান্য বেতন-ভাতা বিনিময়ে কিভাবে চলছে অন্যান্য সেক্টরে যেহেতু দিব্যি চলছে, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে সাপ্তাহে দু দিন ছুটিই (বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দু দিন ছুটি বহু বছর ধরে চালু রয়েছে) কেবল দেশের বারোটা বাজাবে এমন চিন্তা অমূলকই।

 

(বেসরকারি শিক্ষকদের সাথে সরকারি চাকুরেদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বৈষম্যের বিষয়ে কয়েকটা কলাম লেখা সম্ভব। সময় পেলে সমানে লিখবো)।

 

— লেখক, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক