বেসরকারি অর্নার্স শিক্ষক এমপিও- যে দেশে কলমের চেয়ে কথার জোর বেশি

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২০

মো: দেলোয়ার হোসেন: “অসির চেয়ে মসির শক্তি বেশি। ” ছোটোবেলা থেকেই উক্ত প্রবাদটির সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু দিন যেতো গত হয়েছে প্রবাদ বাক্যটির যথার্থতা আমার কাছে ততোই মলিন ও বেমানান মনে হয়েছে। প্রায়শই অনুজরা জীবনের লক্ষ্য নিয়ে জিজ্ঞাসীব হলে আগের মতো আর নীতিকথা বলিতে যাইনা। মনের অজান্তে একটি ব্যাকুলতা উঁকি মারে যে,” মুই বা কি হইছি আর ওরে মুই কিবা বলমো যাতে হে জীবনে বড় ওইবার পারে!

বহুত দিন আগে আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাকালীন বলেছিলো- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবী নিয়ে কোনোদিন রাস্তায় নামতে হবে না । বক্তব্যটি শুনে খুশিতে আহলাদে আটখানা হয়েছিলাম কিন্তু কিয়ৎক্ষণ পরেই নিরানন্দের সাগরে আনন্দের ঢেউ নিভিয়া গেলো। বলা হয়, বর্তমানে যিনি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে এদেশের শিক্ষাসাগর পরিচালনা করছেন তিনি নাকি মন্ত্রীসভার সবচেয়ে সার্টিফিকেটধারী বিদ্যার জাহাজ! আমার জানামতে এমন কোনো টকশো বা সেমিনার নেই যেখানে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষাজনরা সক্রেটিসগিরির খেলায় মত্ত হয়ে উঠে না এবং শিক্ষা নিয়ে গবেষণা আর যাই কিছুই হোক এরিস্টটলের বক্তব্য দিতে পিছিয়ে থাকেনা কেউই। তদুপরিসত্ত্বেও আমাদের মতো বেসরকারি কলেজের অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের কপালের তালাও খুলে না ; জটলাও সরে না! একসময় এদেশে একজন উচ্চ শিক্ষিত প্রদীপ পাওয়া দুর্লভ ছিলো। অবাক হওয়ার কারণ নেই কেননা চিঠি লেখা বা পড়ার মানুষই ছিলো বিরল।

সরকার দেশের সর্বত্র তথা প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা সর্বোপরি উচ্চ শিক্ষার বীজ ছড়িয়ে দিতে মফস্বল/গ্রামগঞ্জে স্থাপিত হলো অনার্স মাস্টার্স কলেজ। শহরাঞ্চলে এসব বীজ আরো বিস্তরণ ঘটিয়েছিলো। ২৮ বছর আগে বপণ করা বীজে আজ সারাদেশে অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রিধারী লোকজন ভুরিভুরি। বিনা মূল্যে ফল লাভ! এর মানে সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে বেসরকারী কলেজে অনার্স মাস্টার্স কোর্স ১৯৯৩ সালে চালু করেছিলো তা আজ শতভাগ সফল। সরকার এখন sustainable development এর কথা বলে। ভালো কথা কিন্তু সরকার মহোদয়কে একটা সত্য বিষয় অনুধাবন করতে হবে- আমরা পরীক্ষিত সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বলেন আর টেকসই উন্নয়নের কথাই বলেন সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ডিঙিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বেকার বেশি। এরজন্য দায়ী সরকারের অপরিকল্পিত চিন্তাভাবনা।

ঘন ঘন শিক্ষানীতি পরিবর্তনও কোনো অংশে কম নয়। স্বাধীনতার পর কম শিক্ষানীতি প্রণীত হয়নি অথচ আজ পর্যন্ত কোনো শিক্ষানীতির ৫০%ও কায়েম করা সম্ভবপর হয়নি! অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে সর্বশেষ শিক্ষানীতি অতীতের যেকোনো শিক্ষানীতির চেয়ে সবচেয়ে বেশি বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য মনে করা হলেও এটারও সরকারের কতিপয় নীতি নির্ধারকদের মনোমালিন্যের কারণে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। বরং ইদানীং শুনছি আবার শিক্ষানীতি হবে! বর্তমান শিক্ষানীতিতে সুস্পষ্টভাবে বেসরকারি কলেজের অনার্স মাস্টার্স স্তরকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের তাগাদা থাকলেও নব্য কিছু অতি পণ্ডিতদের কারণে আমরা বরাবরই উপেক্ষিত হচ্ছি।

বেসরকারী কলেজে বিএনপি আমলে অনার্স মাস্টার্স চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আওয়ামী আমলে এই স্তরে উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে দিগন্তকারী ও সুদূর প্রসারী বিস্তার ঘটেছে একথা কোনো ভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। নানান অপ্রিয় সোর্স থেকে নানা সময়ে শুনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন নাকি আমাদের ব্যাপারে আন্তরিক না! কিন্তু মানবতার মা শেখ হাসিনা কোনো ভাবেই শিক্ষক সমাজকে অন্তহীন দৃষ্টিতে দেখেন না এটা কসম খেয়ে বলতে পারি। কথায় বলে, “সময় এখন বর্ষাকাল, ছাগল চাটে বাঘের গাল।”

বুঝার বয়স থেকে বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগ জয়গান গেয়ে যে পরিমাণ পোস্ট জীবনে ডেলিভারী দিয়েছি, চারিপার্শ্বে আওয়ামী লীগের ঘ্রাণ মেখেছি, এই আওয়ামী লীগ করার কারণে কতো আত্মীয় স্বজনকে হারিয়েছি। অথচ নব্য চামচাদের ভীড়ে আকাশে তারার মতো মিটমিট করে জ্বলছি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকায় এবং এরআগে আরো দুইবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় বেসরকারি কলেজের অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের একটা বড় অংশ নিঃসন্দেহে মুজিব আদর্শের সৈনিক। আমরা মনেপ্রাণে দেশকে ভালোবাসি, শিক্ষকতাকে ভালোবেসে এই পেশায় এসেছি অথচ নামধারী হাইব্রিড কিছু তেলাপোকার কারণে আজ আমাদের জীবন বিপন্ন হতে চলেছে।

আমরা এখনো বিশ্বাস করি এবং মনেপ্রাণে অনুধাবন করি- আওয়ামী লীগ জনগণের দল, আমাদেরকে আসন্ন এমপিও সংশোধনাধীন নীতিমালাতে অন্তর্ভুক্ত করা থেকে বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগ কখনো আমাদেরকে হতাশ করবে না ইনশাল্লাহ। প্রখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক থমাস গ্রে বলতেন- ” যেখানে অজ্ঞতাই আর্শীবাদ সেখানে জ্ঞানী হওয়াটা বোকামি।” দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে বেসরকারি কলেজে প্রতিযোগিতা করে যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে একটি চাকরি নিয়েছি। মাঝেমধ্যে ভাবি এটা চাকরি নিইনি; জাহান্নামের রশি দিয়া গলায় ফাঁস দিয়েছি।

শত ধিক্! সহস্র ধিক্কার দিচ্ছি আজ নিজেকে বেসরকারী কলেজের অনার্স মাস্টার্স শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের বক্তব্য মন্তব্য ফিরিস্তি শুনলে মনে হয় কলম ধরে মানুষ হওয়ার চেয়ে বরং কলমত্যাজ্য বকলম উরফে গাধা হয়ে থাকলেই হয়তো জন্ম তথা জীবনটা সার্থক ছিলো!

লেখক: বেসরকারি কলেজ অনার্স শিক্ষক