লোভ-ভোগের অতিরিক্ত প্রয়োজন ব্যক্তিকে ভালো চিন্তা করা হতে দুরে রাখে

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৪:৫১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০

মারজাহান আক্তার: আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক আমার মত বাংলাদেশের নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১৬কোটির বেশি। এই দেশে বসবাস করতে গিয়ে জীবন চালিয়ে নিতে গিয়ে দেখতে পাই তেলওয়ালার মাথায় তেল দেয়ার প্রবণতা, টাকার কাছে নীতি-নৈতিকতা হার মানার প্রবণতা মানুষের মধ্যে অনেক বেশি বেড়েই চলছে। বিশেষ করে সরকারি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আঙ্গিনার প্রায় সকল কর্মস্থল গুলোতে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো চিন্তার মানুষ একেবারেই নেই তা বলা যাবে না তবে ভালো চিন্তার মানুষের সংখ্যা এতই সীমিত যে আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে মনেই হতে পারে ভালো চিন্তার মানুষ একেবারেই নেই। এছাড়াও সত্য হল স্বল্প সংখ্যক ভালো মানুষ বৃহত্তর সংখ্যক খারাপ মানুষের সাথে বসবাস করতে গিয়ে( মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব) নিজের ভালোত্ব ধরে রাখা তাদের জন্য অনেকটাই অগ্নি পরিক্ষার মত।

আপনারা জানেন যতক্ষণ একজন মানুষের হায়াত থাকে ততক্ষণ তা চালিয়ে নেয়ার জন্য জীবনকে প্রয়োজনীয় উপকরণের যোগান দিতে হয় আর এই প্রয়োজনীয় উপকরন এর জন্য প্রয়োজন হয় টাকার। কেননা বিশ্ব তথা বাংলাদেশের জীবন ব্যবস্থায় টাকা একটি অন্যতম অপরিহার্য উপাদান যা না হলে জীবনের জন্য কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করা সম্ভব হয় না আর তা না করা হলে জীবন হয়ে যায় স্থবির। এই জন্য যেই প্রবাদ শুনা যায় তাহলো ‘টাকা দেখলে শয়তানও হাত বাড়ায়’ আমার মনে হয় আমাদের জীবন চালিয়ে নেয়ার অন্যতম প্রধান উপকরণ টাকা হওয়ায় টাকা দেখলে কেউ লোভ সামলাতে পারে না যত পায় তত আরো বেশি চায় বলে প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মানুষ এটাও বিশ্বাস করে ‘টাকা থাকলে বাঘের চোখও কেনা যায় বা টাকায় কিনা হয়’ অর্থ্যাৎ শুধু বাংলাদেশে নয় সমগ্র বিশ্বের মানুষ এটা মনে করে টাকা দ্বারা দুঃসাধ্য সকল কাজও সম্পাদন করা সম্ভব হয়।

যে জন্য এই কথা গুলো বলা তা হলো আমরা পরিবারের অভ্যন্তরে, পরিবারের বাহিরে সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের বাহিরে অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করি। এই অর্জন কৃত অর্থ যখন আমাদের প্রয়োজন মোটাতে ব্যর্থ হয় তখন মানুষ ‘অবৈধ’ পথটাকে বেচে নেই আর তখনই তার ভিতরের ভালো মানুষটির মৃত্যু ঘটে। যার কারনে কর্মস্থলের অভ্যন্তরীন মানুষগুলো ও এই কাজের সাথে জড়িত মানুষগুলোকে তাদের কাজ আদায় করে নিতে অন্যায় কাজ করতে বাধ্য করে তাদের অভ্যাসও খারাপ করে তোলে। নিজে তো খারাপ হয় সাথে অন্যদের ও খারাপ হতে বাধ্য করে। বাধ্য করা বিষয়টি পর্যায় ক্রমে এমন এক অবস্থা তৈরি করে নিয়েছে যে ‘অন্যায়টাই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে’। যার ফলাফল হিসেবে দুর্নীতিতে আমরা কয়েক বার বিশ্ব চেম্পিয়ান হয়েছি। টাকা ছাড়া, সুপারিশ ছাড়া লীগাল ওয়েতে আমার দেশে কাজ সম্পাদন হওয়ার সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে অল্প কিছু জায়গা ছাড়া। এছাড়া টাকার জন্য খুন, অপহরণ, অপমান, হেনস্তা ইত্যাদি কমন ঘটনাতো রয়েছে আর এই সবই হচ্ছে ভালো চিন্তা না করতে পারার কারনে।

টাকার লোভ ও অতিরিক্ত ভোগের প্রয়োজন মেটানোর লোভ মানুষের মধ্যকার ভালো মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে দেয় এতে সে ভালো চিন্তা হতে দূরে থাকে। এর জন্য সে আল্লাহর নির্দেশনা পরিপূর্ণ ভাবে অমান্য করে অবৈধ ভাবে কাজ করে চলে যার প্রেক্ষিতে সমাজে যেনা, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদি ঘটনা ঘটে থাকে।

সমাজ এমন একটা অবস্থানে রয়েছে যেখানে ভালো চিন্তা করাকে দুর্বলতা, উপহাসের, অপমানের মনে করা হয়, সত্য কথা বললে শত্রুও(তাদের কাছে মিথ্যা অনিয়ম এগুলো নিয়ম) বেড়ে যায়, আরো কত বেশি ভালো চিন্তার মানুষটার ক্ষতি করা যায় সুযোগ সন্ধানীরা সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে এবং তা করার মধ্য দিয়ে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় তাই চলমান রয়েছে ।

গত কয়েক বছরে আমার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কাজ করতে গিয়ে আমার পর্যবেক্ষণে যা ধরা পড়ল তাহলো অল্প কিছু ভালো মানুষ দেখেছি যারা নিঃস্বার্থ ভাবে কর্মস্থল বা মানুষের জন্য কাজ করেন । অন্যরাও কাজ করেন তবে সে কাজের জন্য হয় উপরের বা জানা কারো সুপারিশ লাগে নয়ত টাকা নয়ত বাহ্যিক সৌন্দর্যর নারী হলে তো বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই? বলতে চাই যে যেখানেই কর্ম করুক না কেন সেটার জন্য তার একটা পারিশ্রমিক অবশ্যই নির্ধারিত থাকে। তারপর ও ইচ্ছায় অনিচ্ছায় মানুষের মধ্যে ‘নীতি-নৈতিকতা হীনতা বা অনিয়মের যে বদঅভ্যেস তৈরি হয়েছে তাই হল এখন আমার সমাজের নিয়ম’ আর এই নিয়ম দ্বারা এখন সমাজের মানুষ চালিত হচ্ছে। শিক্ষা পরিবেশ ডট কম (৯ ডিসেম্বর ২০২০) এ একজন সহকারী শিক্ষা অফিসারের কথা তুলে ধরা হয়েছে যিনি গিফট হিসেবে রান্না করা খাবার সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই নিতেন। তিনার মত প্রায় সকল সেক্টরে বেশির ভাগ কর্মীরা নেন তবে তিনির মত সব ধরণের জিনিস নেন না এই পার্থক্য রয়েছে। এসব গিফটে প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা খুশি হয়ে দাতাদের এমনভাবে উৎসাহিত করেন দাতারা ও অন্যরা নিজের দোষ ঢাকতে সেটা অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য মনে করে থাকেন এবং করেন। নেয়ার সাথে আমার দেশের বেশি শিক্ষিত ও উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণী জড়িত যাদের জন্য থাকে ভিতর থেকে ধিক্কার,ঘেন্না, অভিশাপ। ‘অর্থ অর্নথের মূল’ এই কথাটিই আমার দেশের শিক্ষত কর্মীদের সাথে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ কেননা অর্নথ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোগের চিন্তা তাদেরকে ভালো মানুষ হতে পশু বানিয়ে দেয় আর অন্যরা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সেই পশুর আচরণ মানতে বাধ্য থাকে যা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় চলমান রয়েছে।

মানছি চাইলে এত খারাপ মানুষের ভীড়ে ভালো মানুষ তাঁর ভালোত্ব ধরে রাখতে পারে না তবে সেই জন্য শিক্ষিত খারাপ মানুষের বিবেক শুন্যতার কারনে সমাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদের অসম্মানীত করার ব্যবস্থা উচিত তাহলে অন্তত ভালো মানুষ গুলো নিজেদের অবস্থান টা নিয়ে তৃপ্ত থাকতে পারবে পাশাপাশি সত্যি কারের যারা মন থেকে ভালো তাদের জন্য যথাযথ সম্মানের ব্যবস্থা করা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে (এই বাছাই যেন লোক দেখানো ভালো মানুষ না হয়, আবাক হতে হয় যখন দেখি এখানেও অনৈতিকতা অগ্রাধিকার পায়) তাহলে হয়ত ধীরে ধীরে ভালো চিন্তার মানুষগুলোর সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পাবে।

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী এবং এমফিল গবেষক ও শিক্ষক