ভেসে বেড়ানো জীবন বনাম বয়ে বেড়ানো জীবন!

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১৮, ২০২১

সারোয়ার মিরনঃ

চাকচিক্যময় জীবন কিংবা রুপালি পর্দার উৎসবমূখর জীবন যে সবসময় যে সুখকর হবে তা কিন্তু নয়। বস্তুত আমরা যারা সেলিব্রিটি নামের কথিত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় নির্ভর দাম্পত্য জীবন দেখতে অভ্যস্ত! এর ছিঁটে ফোঁটাও তাদের বাস্তব জীবনে নেই। অনেকটা বাহিরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট অবস্থা। অভিনয় নির্ভর কর্পোরেট জীবন এদের মুখে হাসি লাগিয়ে দিলেও বাস্তবতা বলে ভিন্ন। তারই প্রমাণ আমরা কিছুদিন পর পর দেখতে পায়।

তরুণদের আদর্শিক কাপলখ্যাত দম্পতি তাহসান-মিথিলার বিয়ে ভাঙ্গার বছর পূর্ণ হতে চলো। ছয়/সাত বছরের একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানকে রেখে মিথিলা ঘর পেতেছেন ওপার বাংলার সৃজিতের সাথে। আজকে আবার দেখলাম অপর হার্টথ্রব দম্পতি অপূর্ব-নাজিয়া হাসান অদিতি’র সংসার ভাঙলো। এই দম্পতির ও একটি ৪/৫ বছরের সন্তান রয়েছে। উভয়ের ক্ষেত্রেই সংসার জীবন ছিল ৯ বছর সময়কার। এর অাগে জিয়াউল হক ফারুক অপুর্ব’র সাথে বিয়ে হয়েছিলো সাদিয়া ইসলাম প্রভা’র। সেটিও টেকেনি। প্রভা’র ঘটনাবহুল যৌন স্ক্যান্ডালে সম্পর্কের যবনিকা ঘটছে বলে অনেকের ধারনা।

রুপালি পর্দায় অতি ভালোবাসার অভিনয় দেখতে অভ্যস্ত আমরা নিজের সাথে গুলিয়ে ফেলি তাদের জীবন বৈচিত্র্য। অভিনয়েই খুঁজতে থাকি নিজের জীবন প্রবাহ। আর এখানে সবচেয়ে বড় ভুলটা করি। এক সময় প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির সমন্বয় না ঘটলেই খুব সহজেই খেই হারিয়ে ফেলি আমরা। আমরা সেই বোধ হারিয়ে ফেলি যে বোধ আমাদেরকে ভুলিয়ে দেয় কাটপিসময় সেলুলয়েড অার বাস্তব জীবন এক নয়। অভিনয় কিংবা নাটক কখনই এক হতে পারেনা।

সিনেমা পর্দায় ঝড় তোলা বহু সফল জুটি এবং বাস্তব স্বামী স্ত্রীর জীবন ছন্নছাড়া হতে দেখেছি আমরা।সফলতার সর্বোচ্চ স্তর থেকে ছিটকে নর্দমার কীট হতেও দেখেছি। বেশিরভাগই স্থায়ীভাবে সংসার কর্ম সম্পাদন করতে পারেননি। একেক জন চার-পাঁচটি বিয়ে-শাদী পর্যন্ত করেছেন। অনেকেই আবার নির্বাসিত জীবন-যাপন করেছেন পরবর্তী বিয়ে অার না করতে পেরে।

অতি আবেগী সিনেমা দেখে দেখে আমরা অতি প্রত্যাশি হয়ে গেছি। ফলে বাস্তব জীবনে সেক্রিফাইস এর বিষয়টা স্বামী-স্ত্রীতে এখন ভাটার টানে পতিত। বাস্তবকে সেলুলয়েডের সাথে মেলানোর প্রবৃত্তি নিচকই মানবিক ব্যাধি। পর্দায় থাকে শেখানো বুলি ও রোল। বাস্তবে বহু চড়াই উৎরাই। এ বহমান সত্য ও চলার চক্রে দেখে শেখা রোলের সাথে মেলেনা বলে সংসারে নেমে অাসে বিপর্যয়। যা ভাংগনে রুপ নেয়।

সেলিব্রেটিরা টাকার জন্য অভিনয় করে। দাপুটে জীবন প্লে করে। কিন্তু বাস্তবে! তারা অসহায়। পর্দায় যতটা অাদর্শিক নিজ সংসারে ঠিক ততটা ব্যর্থ। প্রাত্যহিক নানান চরিত্রে প্লে রোল করা মানুষটা ঘরে ফিরে একঘুঁয়ে বোধ করাটাই স্বাভাবিক। ওরা টাকার জন্য হাসে, কাঁদে। দিন শেষে মদ্যপ্য হয়ে বাসায় ফিরে, বউ পেটায়। সংসার কর্মে উদাসীন। অভিনয় জীবনে অভ্যস্তরা বাস্তবে সাবলিল হয়ে উঠতে পারেন না বলেই সংসার ধর্মে বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়। এতেই বিচ্ছেদ খড়্গ নামে।

স্বামী- স্ত্রী ঘুমাচ্ছে। বাসায় চোর এলো। স্ত্রী চেঁচিয়ে তার পুলিশ স্বামীকে ডাকছে, এই উঠো চোরে সব নিয়ে যাচ্ছে! স্বামী বেচারা ঠিক ততটাই চিংকারে জবাব দিচ্ছে, আমি এখন ডিউটিতে নাই! চিরন্তন বাক্যটিই আজ আবার পাঠকদের জন্য স্মরন করে দিচ্ছি, মানুষ অভ্যাসের দাস! সারাদিন যা করবে বা ভাববে দিনান্তে সেটিই জাবর কাটবে।

 

লেখকঃ সম্পাদক, দেশালোক ডটকম

১৮ মে ২০২০